ভুট্টার তেল উৎপাদনে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান কৃষিমন্ত্রীর
দেশে বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টা থেকে তেল উৎপাদন করতে পারলে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা অনেকটা কমানো যাবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। একইসঙ্গে ভুট্টাচাষিরা অনেক লাভবান হবেন এবং পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে বলেও মনে করেন তিনি।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে আজ রোববার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নাসির স্টার্চ, অয়েল অ্যান্ড অ্যানিমেল ফিড ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেডের কারখানা পরিদর্শন শেষে এ অভিমত ব্যক্ত করেন কৃষিমন্ত্রী। এ সময় বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. এছরাইল হোসেন, নাসির গ্লাসওয়্যার অ্যান্ড টিউব ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মো. ফজলুল রহমান, ডিজিএম মো. কাজিমুল বাশার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রোববার কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, ‘উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও ভুট্টা থেকে তেল উৎপাদনের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে শিল্প-কারখানা স্থাপন করে বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টার তেল উৎপাদন করতে পারলে একদিকে যেমন বিদেশ থেকে তেল আমদানি হ্রাস পাবে, অন্যদিকে তেলের দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে দেশের কৃষক লাভবান হবে। পাশাপাশি, দেশের মানুষের পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে।’
কৃষিমন্ত্রী এ সময় উদ্যোক্তাদের ভুট্টার তেল উৎপাদনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং এ ব্যাপারে সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. এছরাইল হোসেন বলেন, ‘দেশে বর্তমানে প্রতি বছর উৎপাদিত ৫৪ লাখ টন ভুট্টা থেকে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টন ভুট্টার তেল আহরণ করা সম্ভব, যার বাজার মূল্য প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। ভুট্টার তেল তৈরির পাশাপাশি ভুট্টা থেকে কর্ন ফ্লেক্স, কর্ন চিপস তৈরি করাও সম্ভব।’
গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে ভুট্টা নতুন সম্ভাবনময় ফসল। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু ভুট্টা চাষের অনুকূল। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতেও ভুট্টার ভাল ফলন হচ্ছে। কৃষকদের কাছেও ভুট্টা চাষ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ফলে ভুট্টার উৎপাদন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে দেশে ভুট্টা চাষের মোট আবাদি জমি সাড়ে ৫ লাখ হেক্টরেরও বেশি আর উৎপাদন ৫৪ লাখ টন। উন্নত দেশে ভুট্টার বহুমুখী ব্যবহার থাকলেও বাংলাদেশে শুধু প্রাণী, পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত ভুট্টার অধিকাংশই (৯৫ শতাংশ) প্রাণি, হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে, ইদানিং খই ভুট্টা, মিষ্টি ভুট্টা (৫ শতাংশ) হিসেবেও মানুষের খাদ্য হিসেবে বেশ গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে।
গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যে আরো জানা যায়, উন্নত বিশ্বে ভুট্টা থেকে র্স্টাচ, ইথানল, জৈব জ্বালানি, তেল উৎপাদনসহ রয়েছে আরো বহুমুখী ব্যবহার। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৫২টি দেশে ভুট্টা থেকে উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্য তেল উৎপাদিত ও ব্যবহৃত হয়। ভুট্টার তেল স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ। এতে কোনো আমিষ বা শর্করা নেই, শতভাগই চর্বি বিদ্যমান যার পুষ্টিমান অন্যান্য তেলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি। ভুট্টার তেলে বিদ্যমান সম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড সয়াবিন ও সূর্যমূখী তেলের সমপরিমাণ। ভুট্টা তেলে ভিটামিন ই (টোকোফেরল) সূর্যমূখী তেলের চেয়ে বেশি। বিশেষত, ভুট্টার তেলে ভিটামিন কে (১.৯ মাইক্রো গ্রাম) রয়েছে যেখানে সয়াবিন ও সূর্যমূখী তেলে তা অনুপস্থিত। এ ছাড়াও সালাদ, বিস্কুট, চানাচুর, কেক, পাউরুটি, মাখন তৈরি করতে ভুট্টার তেল ব্যবহৃত হয়।