মায়ার্সের ইতিহাস গড়া ব্যাটিংয়ে হারল বাংলাদেশ
লক্ষ্যটা বিশাল। ৩৯৫ রানের বড় লক্ষ্যের জবাব দিতে নেমে ৫৯ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুর সেই চাপ সামলে অভিষিক্ত ক্রিকেটার কাইল মায়ার্সের ব্যাটে অবিশ্বাস্যভাবে চট্টগ্রাম টেস্টে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারী দল। মায়ার্সের ইতিহাস গড়া ডাবল সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের রান পাহাড় টপকে তিন উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে ক্যারিবীয়রা।
এই জয়ের সুবাদে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কাইল মায়ার্স খেলেছেন ২১০ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। ৩১০ বলে তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ২০ বাউন্ডারি ও সাত ছক্কায়। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করা ক্রিকেটার এখন মায়ার্স। একই সঙ্গে টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান তিনি। আর ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে চতুর্থ ইনিংসে অভিষেকে করেছেন দ্বিশতক।
তিন উইকেটে ১১০ রান নিয়ে আজ রোববার টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিন শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শেষ দিন লড়াই জমিয়ে তোলেন দুই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান মায়ার্স ও বোনার। বিশাল লক্ষ্যের চাপ সামলে দিনের শুরু থেকে সাবলীল ব্যাট করেন দুজন। অবশ্য দিনের শুরুতে এই জুটি ভাঙার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু লিটন দাসের ক্যাচ মিসের কারণে খেসারত দিতে হয় বাংলাদেশকে। প্রথম ঘণ্টায় বোনার ও মায়ার্স মিলে যোগ করেন ৮৭ রান। এরপর অবিচ্ছিন্ন থেকেই শেষ করেন প্রথম সেশন।
লাঞ্চ বিরতির পর দ্বিতীয় সেশনে এসেই অভিষেকে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন মায়ার্স। বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের করা বল স্লিপ দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান মায়ার্স। সেঞ্চুরি করতে খেলেছিলেন ১৭৮ বল।
সেঞ্চুরির পরও বোনারের সঙ্গে দারুণভাবে এগিয়ে যান মায়ার্স। বিশাল রানের চাপ সামলে পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন দুজন। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় সেশনে ভয়ংকর এই জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। এলবির ফাঁদে ফেলে বোনারকে ৮৬ রানে থামান তাইজুল, ভাঙে ২১৬ রানের জুটি। কাল শেষ সেশন থেকে শুরু করে দুজন মিলে খেলেন মোট ৪৪২ বল।
বোনারের পর উইকেটে ফিরে যান জার্মেইন ব্ল্যাকউড। তাঁকে সাজঘরে পাঠান নাঈম হাসান। দুই সতীর্থ ফিরলেও উইকেটে জমে যান মায়ার্স। উইকেটে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে দলকে সাফল্য এনে দেন। তাইজুল, নাঈম, মিরাজদের স্পিনকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে গেছেন নিজের ছন্দে। প্রতিরোধ ভাঙতে পারেননি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও। মায়ার্সকে মোটেও পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি তিনি। উইকেটে থিতু হয়ে চট্টগ্রামের মাটিতে রূপকথার নায়ক হয়েই শেষ করলেন মায়ার্স। শেষ পর্যন্ত ২১০ রানে অপরাজিত থাকলেন মায়ার্স।
এর আগে প্রথম ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজের সেঞ্চুরিতে ৪৩০ রান করে বাংলাদেশ। বিপরীতে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করে ২৫৯ রান। লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মুমিনুল হকের সেঞ্চুরিতে ২২৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের দেওয়া ৩৯৫ রানের লক্ষ্য টপকে জয় তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৪৩০/১০ (১৫০.২ ওভার) ও ২২৩/৮ (ডি.)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২৫৯/১০ ও ৩৯৫/৭ (১২৭.৩ ওভার) (ব্র্যাথওয়েট ২০, ক্যাম্পবেল ২৩, মোজলে ১২, বোনার ৮৬, ব্লাকউড ৯, ডি সিলভা ২০, মায়ার্স ২১০ , কেমার রোচ ০, কর্নওয়াল ০;মুস্তাফিজ ১৩-১-৭১-০, তাইজুল ৪৫-১৮-৯১-২, মিরাজ ৩৫-৩-১১৩-৪, নাঈম ৩৪.৩-৪-১০৫-১)।
ফল : তিন উইকেটে জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ।