পাঞ্জাবে পড়েছেন সনদ কই, সাকা চৌধুরীকে প্রধান বিচারপতি
মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘আপনি তো পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, পড়েছিলেন বলছেন। কিন্তু এটার সার্টিফিকেট (সনদ) কই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন কিন্তু সার্টিফিকেট নেই। একজন বিভাগীয় অধ্যাপকের সনদ দিয়েছেন। এটা কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এটা হতে পারে না।’
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে সাক্ষী সমনের (নতুন করে আটজনের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য) আবেদনের শুনানিতে আজ সোমবার এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সাকা চৌধুরীর রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পর গত ১৯ অক্টোবর পাঁচ পাকিস্তানিসহ আটজন সাক্ষীর সমন চেয়ে আবেদন করা হয়।
এ সময় সাকা চৌধুরীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সাক্ষী সমনের জন্য আমাদের একটা আবেদন আছে।’
এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাদের এফিডেভিট (সাক্ষীদের বক্তব্য) ট্রাইব্যুনালে দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল তো গ্রহণ করেনি।’
জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘সাক্ষীদের বক্তব্য সরাসরি না হওয়ায় খারিজ করেছিল ট্রাইব্যুনাল।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাদের বক্তব্য সঠিক এটা কীভাবে বুঝব? আপনি (সাকা চৌধুরী) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ওই সময়ের (স্বাধীনতার সময়) সংবাদপত্রে তা প্রকাশিত হয়েছে। প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) দেওয়া তথ্য-উপাত্ত প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী দ্বারাও সমর্থিত হয়েছে। এখন এ পর্যায়ে এসে আপনি (সাকা) বলছেন আপনি পাকিস্তানে ছিলেন। এটা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?’
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমি (সাকা) ঘটনাস্থলে ছিলাম না, এটা কনসিডার (বিবেচনা) করেন।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি (সাকা) তো পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, পড়েছেন বলছেন। কিন্তু এটার সার্টিফিকেট কই। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন কিন্তু সার্টিফিকেট নেই। একজন বিভাগীয় অধ্যাপকের সনদ দিয়েছেন। এটা কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এটা হতে পারে না। আপনি (সাকা) লন্ডনে গেছেন, লিঙ্কন ইনে (ব্যারিস্টার) ভর্তির কথা বলেছেন। কিন্তু সার্টিফিকেট কই। এত কাগজ দিলেন পাকিস্তান থেকে সার্টিফিকেট আনতে পারলেন না। আপনি (সাকা) লন্ডন, পাকিস্তান, ওয়াশিংটনে গেছেন, হাউ ফানি, সাটিফিকেট কোথায়? ফজলুল কাদের চৌধুরীর (সাকার বাবা) তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলের বিরুদ্ধে তো মামলা হয়নি। আপনার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে। রায়ে সব কিছু বিবেচনা করা হয়েছে।’
তখন খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘এটাই শেষ সুযোগ। আমার এফিডেভিট পরীক্ষা করে দেখুন।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখন রিভিউ পর্যায়ে এসে এসব তথ্য-উপাত্ত বা আবেদন নেওয়ার স্কপ কম। সুযোগ নেই। সরি।’ খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘তাহলে তাদের (আট সাক্ষী) অডিও রেকর্ড নেন।’ জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সরি।’ এ পর্যায়ে আদালত রিভিউ শুনানির জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করে দেন।
গত ২৯ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধে সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার সংক্ষিপ্তাকারে চূড়ান্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ পৃথকভাবে এ রায় দেন। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
পরে ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের এই বিএনপি নেতার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। পরদিন ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীর আপিল বিভাগের রায় তাঁকে অবহিত করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে পড়ে শোনানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা মৃত্যু পরোয়ানা।
নিয়ম অনুসারে সে থেকে নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই রিভিউ আবেদন করেন সাকা চৌধুরী। যদি এ আবেদন খারিজ হয়ে যায় এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাওয়া হয় তাহলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীর, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৯ অক্টোবর আপিল করেন বিএনপির এই নেতা। ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার হন সাকা চৌধুরী। পরে একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।