খালেদা জিয়া গুপ্তহত্যায় নেমেছেন : প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন গুপ্তহত্যায় নেমেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘দেশে বসে যখন আর মানুষ হত্যা করতে পারল না, তখন নিজেই নাকে খত দিয়ে বের হলো। মামলায় কোর্টে হাজির হলো। নিজের ঘরে ফিরে গেল। রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে এরপর তিনি গেছেন এখন বিদেশে। এখন ষড়যন্ত্র কী? এ দেশে বিদেশিদের হত্যা করতে হবে, তাহলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এখন তিনি গুপ্তহত্যায় নেমেছেন।’
আজ সোমবার জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এই গুপ্তহত্যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, এমনকি লেখক প্রকাশক, বিদেশি (খুন করা হচ্ছে)।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারাই ধরা পড়ছে, দেখা যাচ্ছে, তারাই ছাত্রজীবনে শিবির, বিএনপি করত বা ছাত্রদল করত। অর্থাৎ দেশে না পেরে বিদেশে বসে এখন তিনি গুপ্তহত্যা শুরু করেছেন।’
‘যখনই এ দেশের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পায়, দেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়, তখনই খালেদা জিয়া দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র শুরু করেন,’ বলেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কোনো মহল প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যে এদেশে আইএস আছে, এ দেশে সন্ত্রাস আছে। এ দেশে সন্ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল বিএনপি-জামায়াত মিলে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস নির্মূল করছে। যে যেখানেই হোক এখানে সন্ত্রাস করলে কেউ রেহাই পায় না। আমরা সঙ্গে সঙ্গে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই।’
’৭৫-এর পর খুনের রাজনীতি শুরু হয়
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ খুনিদের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই দুই হত্যাকারীদের জিয়াউর রহমান বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত হিসেবে চাকরি দিয়েছিল। তাদেরকে বিচারের হাত থেকে মুক্ত করে দিয়েছিল। এর পর থেকেই বাংলাদেশে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, যেসব যুদ্ধাপরাধীর বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন, যারা ৭১-এ বাংলাদেশের মা-বোনদের হানাদারদের হাতে তুলে দিয়েছিল, ইজ্জত লুটেছিল, পাকিস্তানিদের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়েছিল, গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে ছারখার করে, লুটতরাজ করে, অগ্নিসংযোগ করেছিল। সেই সব খুনিদের বিচার তো জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী জেলে ছিল। সেই সব যুদ্ধাপরাধীদের কারাগার থেকে শুধু মুক্তই করেনি বরং তাদের বিরুদ্ধে যে আইনের বলে মামলা ছিল তা মার্শাল অর্ডিন্যান্স দিয়ে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। তাদের মুক্ত করে, সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে দিয়ে তাদের ভোটের আর রাজনীতি করার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের চাকরি দিয়ে, মন্ত্রী বানিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। এভারে একটি দেশের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। সে সময় সেনাবাহিনীতে ১৯টা ক্যু হয়েছিল। সেনাবাহিনীর ভেতর প্রায় সকল মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করেছিল জিয়া।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের মানুষের মাঝে যখন শান্তি ফিরে আসছিল ঠিক সেই সময় ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড ও একের পর এক ক্যু করে মানুষের সব স্বপ্ন নস্যাৎ করেছিল জিয়াউর রহমান।’
‘বিএনপি ক্ষমতায় আসলেই খুনের রাজনীতি কায়েম করে’
শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশ এগিয়ে যায়। তবে আবারও ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে এ দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার শুরু করে। সে সময় জঙ্গিবাদের উত্থান হয়, বাংলা ভাই সৃষ্টি হয়। জিয়াউর রহমানের পথ ধরে তার স্ত্রী এ দেশে খুনের রাজনীতি কায়েম করে। যার ফলে এদেশে ইমার্জেন্সি আসে। তার পরের ইতিহাস সকলের জানা।
‘২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবার খাদ্যে স্বয়সম্পূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলে, মানুষের জীবনে শান্তি নেমে আসে, বিশ্বের কাছে রোল মডেলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে নির্বাচন নস্যাৎ করার জন্য শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে বিএনপি। কারণ বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে তারা নির্বাচনে অংশ পর্যন্ত নেয়নি। ২০১৪ সালে বৈবী অবস্থার মধ্যে ৪০ ভাগ ভোট পড়েছিল। এই দেশের মানুষ সাহসে ভর করে ভোট দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়।’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
নিজের সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি, শিক্ষানীতি দিয়েছি, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের জন্য আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, ১০০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেছি, দরিদ্র মানুষকে বিনা পয়সায় খাদ্য দিচ্ছি, খাদ্য রপ্তানি করছি, আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে। পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে শুরু কেরছি। এ দেশে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি, বৃত্তি দিচ্ছি। দেশে সাক্ষরতার হার বেড়েছে, মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
‘মানুষ শান্তিতে থাকলে একজনের মনে অশান্তি শুরু হয়’
বাংলাদেশের মানুষ শান্তি থাকলেই বিএনপির চেয়ারপারসনের মনে অশান্তি শুরু হয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মানুষের মনে যখনই শান্তি আসে অশান্তি শুরু হয়ে যায় একজনের মনে। মানুষের শান্তি তিনি দেখতে পারেন না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দেখলে অশান্তি শুরু হয় একজনের মনে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯৩ দিন নিজেই নিজের অফিসে বসে থেকে মানুষ পুড়িয়ে মারার আন্দোলন করলেন। ছোট্ট দুধের শিশু সে আগুন থেকে রেহাই পায়নি। বাসের যাত্রী, হেলপার, চালকসহ খেটে খাওয়া মানুষ রাস্তায় চলতে পারেনি। আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনা সেই পাকিস্তানি বাহিনীরা ঘটিয়েছিল আর এখন ঘটাল জিয়ার স্ত্রী। আজকে ২৮২ দিন তার অবরোধ চলছে। এখন পর্যন্ত তিনি অবরোধ প্রত্যাহার করেন নাই। দেশে বসে যখন হলো না তখন তিনি বিদেশ চলে গেলেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আজকে যারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত তাদেরকেই পুরস্কৃত করেছিল বিএনপি। কাজেই এরা তো স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। এরা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চায়। মানুষ দরিদ্র থাকুক, শিক্ষিত না হোক, ধুঁকে ধুঁকে মরুক এটাই তারা চায়।’
‘তবে একটা কথা বলি, গুপ্তহত্যা, খুন যাই করা হোক না কেন বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’ বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে চাচ্ছে তাদের আমি সাবধান করতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনচেতা মানুষ। কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে তারা মাথা নত করে না। আর এই গুপ্ত হত্যা যারা করেছে তাদের ইতিমধ্যেই কিছু খুঁজে বের করা হয়েছে এবং বাকিদেরও খুঁজে বের করা হবে। এবং সেই সাথে সাথে এদের লিংকটা কোথায়, এদের মুরব্বি কোথায়, এদের বড় ভাই কোথায় তাদেরকেও খুঁজে বের করে এই মাটিতেই আমরা ইনশাআল্লাহ শাস্তি দেবই দেব।’
বাংলাদেশের মানুষের সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবে ওই ২০১৩ এবং ২০১৫-তে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছিল তখন যেভাবে আপনারা সাধারণ মানুষ একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা প্রতিহত করেছিলেন এখনো সময় এসেছে প্রত্যেকটা মানুষ যারা শান্তি চান, উন্নতি চান, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন তারা কারা খুনি? তাদের বের করতে আপনারাও সহযোগিতা করেন। আমি মনে করি বাংলাদেশের মানুষ যদি এভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ায় তাহলে এই খুন, গুম-খুন, হত্যার বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়ায় তাহলে এরা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খলতে পারবে না।’
‘পাকিস্তানের জন্য ওনার যত পেয়ার’
খালেদা জিয়া পাকিস্তানের প্রতি প্রীতি ভুলতে পারেন না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানের জন্য প্রেম প্রীতি উনি ভুলতে পারেন না। এটাই সমস্যা। পাকিস্তানের প্রতি ওনার যত পেয়ারের জন্য বাংলাদেশে এখন এত ভোগান্তি।’
আজকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন উন্নত দেশগুলো তাদের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারে নাই সেখানে আমরা ৬.৫ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আওয়ামী লীগ আনে পুরস্কার আর বিএনপি আনে তিরস্কার।’
বাংলাদেশ কখনোই জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্ণিত করতে চায়, তাদের আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই বাংলাদেশে জঙ্গিদের কোনো স্থান হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে উদযাপন করতে চাই। সেভাবে পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় কথা দেশে আয় বৈষম্য হ্রাস পেয়েছে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাস পেয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২২ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এই পথে যদি কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না। তাদের সাজা পেতেই হবে।’
দেশবাসীকে যে কোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
জাতীয় চারনেতাসহ সব শহীদের প্রতি অঙ্গীকার করে সবশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা উন্নত দেশে পরিণত করব। সেই অঙ্গীকার করেই আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি দেশকে এগিয়ে নিতে সবাই মিলে কাজ করুন।’