রাত পোহালেই ২৯ পৌরসভায় ভোট
রাত পোহালেই পঞ্চম ধাপে ২৯ পৌরসভায় ভোট। রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে এসব পৌরসভায়। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ধাপে সব পৌরসভায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।
ভোটগ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে ভোটের প্রচার শেষ করেছে প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা। প্রচারের শেষ মুহূর্তে বেশকিছু ঘটনা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। প্রচারের সময় বিভিন্ন এলাকায় সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। প্রচারে বাধা দেওয়ার নানা অভিযোগ তুলেছেন প্রার্থীরা। এমনকি ভোটকেন্দ্রে না যেতেও ভয় দেখানো হচ্ছে বলেও কিছু প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। তাঁরা বুথ দখলের শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।
ইসি বলছে, নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ধাপের নির্বাচনি লড়াইয়ে মেয়র পদে রয়েছেন ১০০ জন প্রার্থী, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৬৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে রয়েছেন এক হাজার ৩১৮ জন। এ ছাড়া এদিন চার উপজেলায় উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণও করা হবে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পঞ্চম দফায় ৩১ পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। আগের ধাপের সৈয়দপুর পৌরসভা এসে এ ধাপে যুক্ত হয়েছে। এদিকে যশোর পৌরসভা ও জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার ভোট হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত করা হয়েছে। এবং চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ভোটে সব পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। ফলে ২৯ পৌরসভার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে রোববার।’
এ ধাপের নির্বাচনি লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। পাশাপাশি মেয়র পদে লড়ছেন বেশকিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীও। উৎসবমুখর এ নির্বাচন নিয়ে যেমন রয়েছে উত্তেজনা, তেমনি শঙ্কাও রয়েছে ভোটার ও প্রার্থীদের মাঝে। উদ্বিগ্ন খোদ নির্বাচন কমিশনও (ইসি)। বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য টহল শুরু করেছে গত বৃহস্পতিবার থেকেই। চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। সঙ্গে রয়েছে নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
২৯টি পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচন ও চারটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন উৎসমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা আশা করি, একটা ফ্রি, ফেয়ার, পার্টিসিপেটরি ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘যেখানেই কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেসব বিষয়গুলো আমরা জানতে পারছি, সেগুলো মাঠে আমাদের আইন-শৃঙ্খলায় দায়িত্বে যারা আছেন তাদের ব্যবস্থা নিতে বলে দিচ্ছি। নির্বাচনি সহিংসতায় মারা যাওয়া এটা অবশ্যই দুঃখজনক। তবে আমরা আশা করছি, আগামী দিনে এ রকম ঘটনা আর যেন না ঘটে। এটাই আমাদের আশা, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা ওয়েট করি, দেখি।’
সচিব আরও বলেন, ‘ভোটকে কেন্দ্র করে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। অন্যান্য ধাপের পৌরসভার ভোটে কোথাও কোথাও টুকটাক ঝামেলা হয়েছিল। এবারের ধাপে আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি, যাতে কোনো ধরনের ঝামেলা তৈরি না হয়। যেসব এলাকাকে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বেশি মোতায়েন থাকবে। আর কোথাও অনিয়মের খবর পাওয়া গেলে ইসি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
যেসব পৌরসভায় ভোট হবে সেগুলো হল যশোরের কেশবপুর, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ও মহেশপুর, চট্টগ্রামের মিরসরাই, বারইয়ারহাট ও রাঙ্গুনিয়া, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, জামালপুরের সদর, মাদারগঞ্জ ও ইসলামপুর, ময়মনসিংহের নান্দাইল, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, গাজীপুরের কালীগঞ্জ, রংপুরের হারাগাছ, রাজশাহীর দুর্গাপুর ও চারঘাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, বগুড়া সদর, জয়পুরহাট সদর, মাদারীপুর সদর ও শিবচর, ভোলার সদর ও চরফ্যাশন, হবিগঞ্জ সদর, চাঁদপুরের শাহরাস্তি ও মতলব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর এবং রংপুরের সৈয়দপুর।
এদিন ঝিনাইদহের শৈলকুপা, ফরিদপুরের মধুখালী, রাজশাহীর পবা ও কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনও হবে।
আবার আগে অনুষ্ঠিত সাতটি পৌরসভায় বন্ধ ঘোষিত ভোটকেন্দ্রগুলোতে এবং মৃত্যুজনিত কারণে চট্টগ্রাম সিটির ৩১ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে, ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভার ৮ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি পৌরসভার ৮ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ও সিরাজগঞ্জ পৌরসভর ৬ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদেও ভোট হবে এদিন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটির ওই ওয়ার্ড ও শৈলকুপায় ভোট হবে ইভিএমে।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার বেশ কয়েক ধাপে পৌরসভা নির্বাচন করছে কমিশন। প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় গত ২৮ ডিসেম্বর। গত ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ভোট হয়। তৃতীয় ধাপে ৬৩টি পৌরসভায় ভোট হয় গত ৩০ জানুয়ারি। চতুর্থ ধাপে ৫৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হয় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর পঞ্চম ধাপে রোববার ২৯ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে। এদিকে ১১ এপ্রিল ষষ্ঠ ধাপে নয় পৌরসভায় ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যেই পৌরসভার ভোট করতে হয়। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়। সেবার ২০টি দল ভোটে ছিল।