চারঘাটে ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ, বিএনপির ভোট বর্জন
ভোটে অনিয়ম, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া এবং হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগ এনে রাজশাহীর চারঘাট পৌরসভার বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী জাকিরুল ইসলাম বিকুল নির্বাচন বর্জন করেছেন।
আজ রোববার দুপুর দেড়টায় পৌর এলাকার নিজ বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে বিকুল এই ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্র দখলে নিতে এবং হত্যার উদ্দেশ্যে আমাকে লক্ষ্য করে থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টার দিকে ককটেল হামলা চালানো হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে গণমাধ্যকর্মীদের সামনে কথা বলার সময় ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরা আমাকে লক্ষ্য করে যে ককটেলের হামলা চালিয়েছে, তা টেলিভিশনের কল্যাণে দেশবাসী দেখেছে। পৌরসভার কোনো কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্টদের থাকতে দেওয়া হয়নি। প্রশাসন নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। বার বার অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। রাষ্ট্রযন্ত্রের এই অসহযোগিতার কারণে আমি মনে করি, ভোটে আমার থাকা উচিত নয়। আমি ভোট বর্জন করছি।’
এ সময় নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চান জাকিরুল ইসলাম বিকুল।
এর আগে চারঘাট পৌরসভার নির্বাচন চলাকালে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চারঘাট পাইলট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে।
এ সময় চল্লিশোর্ধ্ব এক নারী চিৎকার করতে করতে দৌড়ে ঢুকে পড়েন ভোটকেন্দ্রে। এ সময় কেন্দ্রটি পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কথা বলছিলেন বিএনপির প্রার্থী বর্তমান মেয়র জাকিরুল ইসলাম বিকুল। ওই নারী সেখানে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলতে থাকেন, ‘আওয়ামী লীগ কর্মীরা আমাকে ভোটকেন্দ্রে আসার পথে বাধা দিয়ে বলেছে, ফেরার সময় ঠ্যাং (পা) ভেঙে দেবে।’
এই নারী ভোটারের কথার সূত্র ধরে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী বিকুল বলেন, ‘এই চিত্র পৌর এলাকার প্রতিটি কেন্দ্রের। কেন্দ্রের আশপাশে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরা অবস্থান নিয়ে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দিচ্ছে।’
এদিকে, রোববার সকাল ১০টার দিকে থানাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তিন দফায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই কেন্দ্রে সকাল ৮টার কিছুক্ষণ আগে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এর পর সকাল ১০টার দিকে বিএনপির প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম বিকুল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর পেছনে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। আরেকটি ককটেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করে পুলিশ। আওয়ামী লীগ প্রার্থী একরামুল হকও সে সময় অবস্থান করছিলেন ওই কেন্দ্রে। হঠাৎ করেই ককটেল বিস্ফোরিত হলে উপস্থিত ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে কিছুক্ষণ পরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
এদিকে, ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণের এই ঘটনার জন্য প্রধান দুই প্রার্থী একে অন্যকে দুষছেন। বিএনপির প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম বিকুল বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা ভোটকেন্দ্র দখলে নিতে, ভোটারদের আতঙ্কিত করে ভোটকেন্দ্র ফাঁকা করতে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। ককটেল হামলা করে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যও ছিলো।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একরামুল হক বলেন, ‘এটা বিএনপি ও জামায়াত ক্যাডারদের কাজ। তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করতেই এই হামলা চালিয়েছে।’
চারঘাট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, ‘কারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা বলতে পারব না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
বিএনপির প্রার্থীর ভোট বর্জনের বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। বিএনপির প্রার্থী কেন নির্বাচন বর্জন করেছেন, সেটা তিনিই বলতে পারবেন।
চারঘাট পৌরসভা ছাড়া রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌরসভা ও পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনও রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছে।