অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানি স্থগিত করল ভারত
ভারতে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটি স্থগিতাদেশ জারি করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
বিবিসি বলছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভারতে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আগামী সপ্তাহগুলোতে স্থানীয়ভাবে টিকার চাহিদা বাড়বে বলে ধারণা করছে কর্তৃপক্ষ। তাই, ভারতে অধিক পরিমাণ টিকা সরবরাহ করার প্রয়োজন হতে পারে।
কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, টিকা রপ্তানিতে ‘সাময়িক সংকোচনের’ ফলে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত টিকার যোগান প্রভাবিত হতে পারে।
ভারতের এই পদক্ষেপের ফলে কোভ্যাক্স পরিকল্পনার অধীনে থাকা ১৯০টি দেশে প্রভাব পড়তে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে পরিচালিত কোভ্যাক্স পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হলো সব দেশের জন্য ন্যায্যভাবে টিকার যোগান নিশ্চিত করা।
ভারতের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশে টিকার চালান নির্দিষ্ট সময়ে পাঠায়নি।
বাংলাদেশেও ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিশ্রুত ৫০ লাখ ডোজের মধ্যে ২০ লাখ ডোজ চালান এসেছে। এবং মার্চের টিকার চালান এখনও আসেনি।
ভারত এরই মধ্যে ৭৬টি দেশে ছয় কোটি ডোজ টিকা রপ্তানি করেছে, যার অধিকাংশই ছিল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা।
ভারত কেন এই পদক্ষেপ নিল?
ভারত এমন সময়ে সিদ্ধান্তটি নিল, যখন দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ভারতে গতকাল বুধবার নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ, যা এ বছরে দৈনিক আক্রান্তের হিসোবে সর্বাধিক। এ ছাড়া গতকাল ভারতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৭৫ জনের।
আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য টিকা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে ভারত। আর এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর টিকার চাহিদা বাড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিবিসি ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র থেকে জেনেছে, ‘(টিকার রপ্তানি বন্ধ) করা সাময়িক একটি পদক্ষেপ। অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে হবে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরও জানিয়েছে, এপ্রিল নাগাদ টিকার যোগান ব্যাহত হতে পারে। তবে, মে মাসে অন্তত আরেকটি ভ্যাকসিনকে জরুরি অনুমোদন দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার থেকে ভারত কোনো টিকা রপ্তানি করেনি।
তবে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ভারতের সরকার বা সেরাম ইনস্টিটিউট আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, সৌদি আরব ও মরক্কোতে করোনাভাইরাসের টিকার চালান পাঠানো স্থগিত করেছে।
সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এ বছর তারা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য একশো কোটি ডোজ টিকা তৈরি করবে।