রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে গাজীপুরের বাসন থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। আজ রোববার সকালে গাজীপুরের টেকনগর পাড়ার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে গাজীপুরে দুটি মামলা হলো। এ ছাড়া ঢাকায় আরেকটি মামলা হয়েছে।
ওসি জানান, মামলায় মাদানীর বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্মীয় বক্তব্যের আড়ালে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদান করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ করেন। এতে তাঁর বিরুদ্ধে মারাত্মক মিথ্যা, ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার মতো অপরাধে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কিছু বিপথগামী ধর্মীয় লেবাসধারী লোক দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর। রফিকুল ইসলাম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নলজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ‘মারকাজুল নূর আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায়’ বসে দেশদ্রোহ ও সরকারবিরোধী কার্যকলাপ এবং নাশকতামুলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করেন। দেশ যখন সারা বিশ্বে সমাদৃত, তখন একাত্তরের পরাজিত কিছু অপশক্তি দেশকে পাকিস্তানের মতো অকার্যকর রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্মীয় বক্তব্যের আড়ালে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদান করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে। এদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম মাদানী অন্যতম। তাঁর রাষ্ট্রদ্রোহী, মানহানিকর ও হেয়প্রতিপন্ন করে উসকানি ও ভীতি প্রদর্শনমূলক বক্তব্য ফেসবুক, ইন্টারনেট ও ইউটিউবে আপলোডের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, রফিকুল ইসলাম মাদানী অপরাপর ব্যক্তির সহায়তার সরাসরি সশস্ত্র জিহাদের ডাক দেন এবং এখনি জিহাদের উপযুক্ত সময় উল্লেখ করে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান। সংবিধান পরিপন্থি, রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল এ ধরনের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উসকানির একটি ভিডিও গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘উম্মাহ ইসলামিক মিডিয়া’ নামের একটি ফেসবুক পেজে এবং ৪ এপ্রিল ‘বিডি নিউজ টিভি’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়। তাঁর ওই বক্তব্যে সশস্ত্র জিহাদের আহ্বান রয়েছে। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ ও হেয় করে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শনপূর্বক উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঠেকাতে যুবকদের এয়ারপোর্টে ঘেরাওয়ের মতো সহিংসতার আহ্বানও জানান তিনি। ফেসবুক, ইন্টারনেট, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত তাঁর এসব বক্তব্য সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনার মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
গত বুধবার ভোররাতে আলোচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার লেটিরকান্দা এলাকার বাড়ি থেকে আটক করেন র্যাব-১-এর সদস্যরা। ওই দিন রাতেই গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানায় তাঁকে হস্তান্তর করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ওই থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত বৃহস্পতিবার একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওইদিন মতিঝিল থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা হয়। গাজীপুরের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই দিনই গাজীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে তাঁকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে দুদিন থাকার পর গতকাল শনিবার তাঁকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ স্থানান্তর করা হয়।