মার্কিন গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপ করলে আরও ব্যবস্থা নেব : রাশিয়াকে বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কোনো বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া যায় না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা এবং সাইবার হামলার কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার পর বাইডেন এ কথা বলেন। সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা এ খবর জানিয়েছে।
জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে বলেন, ‘আজ আমি রাশিয়ার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে তাঁদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ বহিষ্কারসহ কয়েকটি পদক্ষেপের অনুমোদন দিয়েছি।’
‘রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে যে ক্ষতিকারক পদক্ষেপ নিয়েছে তার জন্য নিষেধাজ্ঞাসহ নতুন পদক্ষেপের অনুমোদন দিয়ে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছি’, যোগ করেন বাইডেন।
যুক্তরাষ্ট্র গতকাল ১০ জন রুশ কুটনীতিককে বহিষ্কারসহ প্রায় তিন ডজন কোম্পানি ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। গত বছরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং একাধিক কেন্দ্রীয় দপ্তরে সাইবার নিরাপত্তা লঙ্ঘন ও হস্তক্ষেপের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন রাশিয়াকে দায়ী করছে। জো বাইডেন গতকাল রাশিয়ার ওপর এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন।
যুক্তরাষ্ট্র বলছে, গত বছর টেক্সাসকেন্দ্রিক একটি সফটওয়্যার ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান সোলার উইন্ডসে সাইবার নিরাপত্তা যে ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে তা ছিল রাশিয়ার দিক থেকে গোপন সংবাদ সংগ্রহের একটি অংশ। বলা হচ্ছে ওই হ্যাকিং প্রক্রিয়ায় রুশ হ্যাকাররা যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত নয়টি দপ্তরকে তাদের নাগালের মধ্যে নিয়ে এসেছিল। মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, ওই হ্যাকিং ছিল গোপন তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা।
এদিকে ওই নির্বাহী আদেশের পর বাইডেন জানান, তিনি এ সপ্তাহের শুরুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোনে জানিয়েছিলেন যে, তিনি (বাইডেন) এর চেয়ে আরও বেশি পদক্ষেপ নিতে পারতেন, কিন্তু তিনি চান না ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ুক।
বাইডেন বলেন ‘রাশিয়া যদি আমাদের গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপ করা অব্যাহত রাখে, আমি এর বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছি।’
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করায় ও গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টার কারণে মস্কো-সংশ্লিষ্ট ৩০টি সংস্থা ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিসহ ওয়াশিংটনের রাশিয়ার দূতাবাসের ১০ জন কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের সাইবার নিরাপত্তা লঙ্ঘন ঘটনা ঘটেছিল। হ্যাকাররা টেক্সাস ভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবস্থাপনা সংস্থা সোলার উইন্ডসসহ, কয়েক হাজার সংস্থা এবং একাধিক সরকারি সংস্থার সিস্টেমে প্রবেশের পথ করে দেয়। এসব ঘটনায় বাইডেন প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এসভিআরকে দোষারোপ করে। তবে রাশিয়ার গুপ্তচর সংস্থা এই অভিযোগকে ‘অর্থহীন’ ও ‘বানোয়াট’ বলে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দেয়।
এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা রাশিয়াতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জন সালিভানকে বলেছে যে, এই নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মারাত্মক এক ধাক্কা। এবং মস্কো খুব শিগগিরই এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেবে তা অনুমিত ছিল। তবে এসব দৃশ্যমান পদক্ষেপ ছাড়াও আরও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা অদেখা থেকে যাবে।
বাইডেন স্থানীয় সময় গতকাল বিকেলে সাত মিনিটের বক্তব্যে জানান, এই গ্রীষ্মে ইউরোপের কোনো এক সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে পুতিনের বৈঠক হবে।