আরমানিটোলায় অগ্নিকাণ্ড : ভবন ও গুদাম মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা
রাজধানীর বংশালের আরমানিটোলার হাজি মুসা ম্যানসনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ভবন এবং একাধিক রাসায়নিকের গুদামের মালিকের নামে মামলা করেছে বংশাল থানা পুলিশ।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন ফকির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আজ শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে মামলাটি করা হয়েছে। মামলায় ভবন মালিকের পাশাপাশি নীচতলার রাসায়নিকের গুদামের মালিকদেরও আসামি করা হয়েছে। ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাত রেখে মামলাটি করা হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে মামলার সব আসামির নাম বলা যাচ্ছে না।’
ওসি বলেন, এই ঘটনায় কোনো ভুক্তভোগী পরিবার বাদী হয়ে মামলা করেনি। তাই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। যেহেতু এ ঘটনায় চারজন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে, তাই পুলিশ মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবহেলার কারণে মৃত্যু ও দাহ্য পদার্থ রাখার কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে- এটাই বলা হয়েছে মামলাটিতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে হাজী মুসা ম্যানশন নামের ভবনটির নিচতলায় আগুন লাগে। আজ সকাল ৯টার পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট প্রায় ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ভবনের নিচতলার মার্কেটে ১৬ থেকে ২০টি দোকান রয়েছে। এর ভেতরে পাঁচ-ছয়টি দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এসব দোকানে রাসায়নিক পণ্য কেনাবেচা হতো। আমাদের ধারণা, রাসায়নিকের গুদাম থেকেই আগুন লেগেছে।’
তবে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত, তা তদন্ত করে দেখা হবে। তাঁরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলেও জানিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় দগ্ধদের রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসাধীন কেউ শঙ্কামুক্ত নয়।
এ ব্যাপারে বিকেলে বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন এনটিভি বলেন, ‘ভর্তি ২০ জনের মধ্যে আশিকুজ্জামান, ইসরাত জাহান মুনা, সাফায়েত হোসেন ও খোরশেদ আলম নামের চারজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। চারজনের মধ্যে দুজনকে আবার লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। এ চারজনের অবস্থা বেশি গুরুতর।’
সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, ‘ভর্তি হওয়া বাকি ১৬ জনকে ইউনিটের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে। ভর্তি ২০ জনেরই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। এখনি কাউকে শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। ভর্তি ২০ জনের ১৫ থেকে ২২ ভাগ দগ্ধ হয়েছে।’
এ ঘটনায় যে চারজন মারা গেছেন তাঁরা হলেন- ভবনের নিরাপত্তারক্ষী ওয়ালিউল্লাহ, দোকান কর্মচারী রাসেল মিয়া, ভবনের চারতলার বাসিন্দা শিক্ষার্থী সুমাইয়া এবং ওয়ালিউল্লাহ কাছে বেড়াতে আসা কবীর নামে আরেকজন।
অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীনরা হলেন, আশিকুজ্জামান (৩৩), তাঁর স্ত্রী ইসরাত জাহান মুনা (৩০), শ্বশুর ইব্রাহিম সরকার (৬০), শাশুড়ি সুফিয়া বেগম (৫০), শ্যালক জুনায়েদ (২০), ইউনুস মোল্লা (৬০), সাকিব হোসেন (৩০), সাখাওয়াত হোসেন (২৭), সাফায়েত হোসেন (৩৫), চাষমেরা বেগম (৩৩), দেলোয়ার হোসেন (৫৮), আয়সাপা (২), খোরশেদ আলম (৫০), লায়লা বেগম (৫৫), মোহাম্মদ ফারুক (৫৫), মেহেরুন্নেসা (৫০), মিলি (২২), পাবিহা (২৬), আকাশ (২২) ও আসমা সিদ্দিকা (৪৫)।