করোনাকবলিত পরিবারের ‘পাশে থাকতে’ আইপিএল থেকে বিরতি অশ্বিনের
আইপিএলে গতকাল রোববার সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে উত্তেজনাকর ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকায় একধাপ এগিয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। তবে ম্যাচের পর দিল্লির জয়ের আনন্দ অনেকটাই ফিকে হয়ে যায় দলের অন্যতম সদস্য রবিচন্দ্রন অশ্বিনের এক সিদ্ধান্তে। পরিবারের সদস্যেরা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত, তাই পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত এবারের টুর্নামেন্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন অশ্বিন।
নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে অশ্বিন লিখেছেন, ‘আগামীকাল (২৬ এপ্রিল) থেকে এ বছরের আইপিএল থেকে বিরতি নিতে যাচ্ছি। আমার পরিবার এবং আমার বর্ধিত পরিবার (স্ত্রীর পরিবার) করোনা বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত। আর, এমন কঠিন সময়ে আমি তাঁদের পাশে থাকতে চাই। সব কিছু প্রত্যাশামতো সঠিক দিকে এগোলে, আশা করছি আবার খেলায় ফিরে আসব।’
করোনা বিধ্বস্ত ভারতে প্রতিনিয়ত সংক্রমণ বাড়ছে। এর মধ্যে আইপিএল থেকে কেউ জৈব বলয়ের ক্লান্তি, আবার কেউ নিজস্ব কারণ দেখিয়ে নাম তুলে নিচ্ছেন। তবে এতদিন তা সীমিত ছিল বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে। এবার প্রথম ভারতীয় হিসেবে সেই তালিকায় যুক্ত হলো অশ্বিনের নাম।
এর আগে একের পর এক বিদেশি খেলোয়াড় হারিয়ে গভীর সংকটে পড়েছে রাজস্থান রয়্যালস। বেন স্টোকস ও জফ্রা আর্চার চোটের কারণে এবারের আইপিএলে আর খেলছেন না। এ ছাড়া জৈব সুরক্ষা বলয়ের ক্লান্তিতে ইংল্যান্ডে ফিরে গেছেন লিয়াম লিভিংস্টোনও।
এরপর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দেশে ফিরেছেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার অ্যান্ড্রু টাই। এবারের আইপিএলে তিনি একটি ম্যাচেও সুযোগ পাননি।
টাই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে দেশে ফিরলেও জানা গেছে, ভারতে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়েই দেশে ফিরে গিয়েছেন তিনি। শুধু টাই একাই নন, আরও অন্তত দুজন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জানিয়ে দিয়েছেন, ফ্লাইটের ব্যবস্থা হলেই তাঁরা দেশে ফিরে যাবেন।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড-বিসিসিআই ও ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পক্ষ থেকে বারবার ক্রিকেটারদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে, দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে আইপিএল হচ্ছে। ফলে চিন্তার কিছু নেই। মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বার্তা দলগুলো যেমন দিচ্ছে—তেমনি খেলার মধ্যেও সেই বার্তা দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সময়। সবার সতর্কতাতেই যে করোনাকে জয় করা সম্ভব, তা বলা হচ্ছে বার বার। করোনাকে জয় করে এসে এবারের আইপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচে অক্ষর প্যাটেল যেমন সফল হয়েছেন, তেমনি দেবদত্ত পাডিক্কাল শতরান করেছেন, দলকে ভরসা দিচ্ছেন।
কিন্তু এ সবেও ভীতি কাটছে না বিদেশি ক্রিকেটারদের। দিল্লি ক্যাপিটালসের কোচ রিকি পন্টিং বলেছেন, ভারতে করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক। অস্ট্রেলীয়রা আরও বেশি করে দেশে ফিরতে চাইছেন এই কারণে যে, সে দেশে কোয়ারেন্টিন-সংক্রান্ত নিয়ম আরও কঠোর হচ্ছে। তার আগেই তাঁরা দেশে ফিরতে চাইছেন। এর সত্যতা স্বীকার করেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের সহকারী কোচ ডেভিড হাসি। ডেভিড হাসি বলেছেন, অনেক অসি ক্রিকেটারই দেশে ফেরার ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। ইংল্যান্ডেও এরই মধ্যে লাল তালিকায় ঢুকে পড়েছে ভারত।
ফ্র্যাঞ্চাইজিরা অবশ্য এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। ভারতে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুমিছিল বেড়ে চললেও আইপিএল চালানোয় অনেকেই বিসিসিআই’র সমালোচনা করছেন। তবে সফল আইপিএল আয়োজন করে টি-২০ বিশ্বকাপ আয়োজনের বিষয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে চায় বিসিসিআই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াসহ বাকি বিদেশি ক্রিকেটারেরা নিজ নিজ দেশে ফিরে গেলে তা নিঃসন্দেহে আইপিএলের জন্য বড় ধাক্কা হবে।