মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড এড়াতে আইনজীবীর আট যুক্তি
আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পক্ষে রিভিউ শুনানিতে আটটি যুক্তি তুলে ধরেছেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। এ যুক্তিগুলোর মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতার মৃত্যুদণ্ড এড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি।
খন্দকার মাহবুব হোসেনের প্রথম যুক্তি- বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগের সমর্থনে রাষ্ট্রপক্ষ দুজন সাক্ষী হাজির করে। তাঁরা হলেন রুস্তম আলী মোল্লা ও জহির উদ্দিন জালাল। ১৯৭১ সালে রুস্তম আলী মোল্লার বয়স ছিল ১৪ বছর এবং জহির উদ্দিন জালালের বয়স ছিল ১৩ বছর। রুস্তম আলী মোল্লা নিজেকে এ ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে দাবি করলেও তাঁর সাক্ষ্যে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য বিদ্যমান। আর জহির উদ্দিন জালাল একজন শোনা সাক্ষী।
দ্বিতীয়- রুস্তম আলী মোল্লা মুজাহিদকে আর্মি অফিসারের সঙ্গে ষড়যন্ত্র এবং পরিকল্পনা করতে দেখেননি। তিনি দাবি করেছেন যে, স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার তিন-চার মাস পর মুজাহিদকে পূর্ব ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের গেটে দেখেছেন। তিনি সাক্ষ্যে স্বীকার করেছেন যে, মুজাহিদকে আগে থেকে চিনতেন না। গেটে প্রহরারত ব্যক্তিরা বলাবলি করছিলেন গোলাম আযম, নিজামী ও মুজাহিদ কলেজে এসেছেন এবং তখন তিনি মুজাহিদ সাহেবকে চিনতে পারেন। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে পূর্ব থেকে ও না চেনা সত্ত্বেও কীভাবে মুজাহিদকে চিহ্নিত করলেন?
তৃতীয়- জহির উদ্দিন জালাল তাঁর সাক্ষ্যে বলেছেন যে নিজামী, মুজাহিদরা ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে আসতেন এই খবরগুলো রুস্তম আলী মোল্লা কেরানীগঞ্জে তাঁকে জানিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা জেরায় স্বীকার করেছেন রুস্তম আলী মোল্লা তদন্তকালে তাঁর কাছে বলেননি যে, বিচ্ছু জালাল নামে কারো সঙ্গে তাঁর পূর্ব পরিচয় ছিল। সুতরাং জালালের দাবি অসত্য প্রমাণিত।
চতুর্থ- রুস্তম আলী মোল্লার বাবা মো. রহম আলী মোল্লা ১৯৭১ সালে ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজের প্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা জেরায় স্বীকার করেছেন যে তিনি আজও জীবিত রয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় তাঁকে সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে হাজির করেননি। ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজের তদন্তাধীন অধ্যক্ষ মহিবুল্লাহ খান মজলিস ও তাঁর ছেলে বর্তমান অধ্যক্ষ তারেক ইকবাল খান মজলিসকেও সাক্ষী হিসেবে হাজির করা হয়নি। প্রাপ্তবয়স্ক একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর সাক্ষ্য না নিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন সাক্ষীর মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত।
পঞ্চম- মুজাহিদের বিরুদ্ধে আর্মি অফিসারের সঙ্গে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সংঘটনের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার অভিযোগ করা হয়। কিন্তু কোন আর্মি অফিসার ও কোথায় ষড়যন্ত্র করেছেন তা কিছুই বলা হয়নি।
ষষ্ঠ- রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ১ নম্বর অভিযোগে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে হত্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আপিল বিভাগ মুজাহিদকে বেকসুর খালাস দেন।
সপ্তম- মুজাহিদকে আলবদর কমান্ডার হিসেবে সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু বুদ্ধিজীবী হত্যার পর ১৯৭১ সালে ৪২টি মামলা দায়ের হয়। একটি মামলাতেও মুজাহিদকে আসামি করা হয়নি। এ ছাড়া মুজাহিদ কখন আলবদর কমান্ডার ছিলেন? কে তাকে নিয়োগ দিয়েছে? তিনি কি প্রথম কমান্ডার নাকি শেষ কমান্ডার এ বিষয়ে কোনো উত্তর দিতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
অষ্টম- আপিল বিভাগ সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে হত্যার জন্য মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে পারেননি। অনুমানের ওপর ভিত্তি করে ১৯৭১ সালে নিহত সব বুদ্ধিজীবী হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার জন্য তাঁকে দায়ী করেছেন।