জবানবন্দি দেননি বাবুল আক্তার, কারাগারে প্রেরণ
মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেননি তাঁর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। পরে বাবুল আক্তারের জামিন আবেদন ও রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান আদালত। আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান এ আদেশ দেন।
এর আগে পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আসামি বাবুলকে বিচারকের খাসকামরায় হাজির করে মিতু মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেখানে কয়েক ঘণ্টা ছিলেন তিনি। তবে বাবুল আক্তার বিচারকের কাছে জবানবন্দি দেননি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী পুলিশ কমিশনার কাজী শাহাবুদ্দীন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, সাবেক এসপি বাবুল আক্তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পিবিআই আবার তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করবে কি না সেটা পরে সিদ্ধান্ত হবে।
মিতু হত্যার অভিযোগে করা মামলায় বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ১২ মে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রথম তিনদিনের জিজ্ঞাসাবাদে একরকম নিরুত্তরই ছিলেন বাবুল আক্তার। পরে কিছু কথা বলেছেন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিচলিত বোধ করছেন তিনি। কথা বলার সময় দু-একবার কেঁদেছেনও।
অবশ্য মিতু হত্যার কারণ-সম্পর্কিত সব প্রশ্নই এড়িয়ে গেছেন বাদী থেকে প্রধান আসামি হয়ে যাওয়া সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তিনি শুধু এটুকু বলছেন, ‘সবই তো জানেন, আমি কী বলব।’
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামের জিইসি মোড় এলাকার বাসার কাছে দুর্বত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছিলেন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। চাঞ্চল্যকর এই হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে মামলা করলে পুলিশ নয়জনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন রাশেদ ও নবী নামের দুই আসামি। পরে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে গত ১২ মে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়। সেদিনই নিহত মিতুর বাবা মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে আটজনের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করেন। যেখানে ঘটনার পরিকল্পানাকারী হিসেবে প্রধান আসামি করা হয়েছে বাবুল আক্তারকে। কক্সবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনকালে ভারতীয় এক এনজিও কর্মীর সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে পারিবারিক কলহ থেকে মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে অভিযোগ মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের।
মামলা করার পর সংবাদ সম্মেলনে বাদী মোশাররফ অভিযোগ করেন, বাবুল আক্তারের সঙ্গে এক এনজিও কর্মীর পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় তাঁর মেয়ের সঙ্গে বাবুলের ঝগড়া হয়। মৃত্যুর আগে মিতু বিষয়টি তাঁদের জানিয়েছিলেন। পারিবারিকভাবে তাঁরা বিষয়টি সমাধানেরও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি। একপর্যায়ে বাবুল ও ওই নারী মিতুকে মেরে ফেলার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে। বাকি সাতজনের নাম আগের মামলায় পুলিশের তদন্তে এসেছিল। আসামিরা হলেন বাবুল আক্তার, কামরুল সিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ভোলা, মোহাম্মদ ওয়াসিম, মোহাম্মদ আনোয়ার, মোহাম্মদ শাহজাহান, মোহাম্মদ সাজু ও মোহাম্মদ কালু।
মিতু হত্যার পর বাবুল মোশাররফের বাসায় ছিলেন। মামলা করতে দেরি কেন করলেন—এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে মিতুর বাবা বলেন, বাবুলের বিষয়ে তিনি পরে নিশ্চিত হয়েছেন। একই ঘটনায় দুটি মামলা হয় না। পিপিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পরে তিনি মামলা করেছেন।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া সাংবাদিকদের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই চিঠি দিয়েছে। আমরা মামলাটি পিবিআইকে দিয়ে দিচ্ছি।’