কোয়ারেন্টিনের টাকা দিতে না পেরে বিপদের মুখে সৌদি প্রবাসীরা
সরকারি ছুটির দিনে সৌদিয়া এয়ারলাইনসের অফিস বন্ধ থাকায় হোটেলে কোয়ারেন্টিনের টাকা জমা দিতে পারেননি প্রবাসীরা। এ কারণে অনেক প্রবাসীই আজ বুধবার ফ্লাইটের টিকেট থাকা সত্ত্বেও সৌদি আরবে যেতে পারবেন না।
কুমিল্লার রুহুল আমিনের আজ দিবাগত রাত ২টার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার কথা। সেজন্য তিনি কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পৌঁছান সকালেই। এরপর কারওয়ান বাজারে সৌদি এয়ারলাইনসের কার্যালয়ে যান হোটেলে কোয়ারেন্টিন খরচ বাবদ ৬০ হাজার টাকা জমা দিতে। কিন্তু এয়ারলাইনসের মূল গেট বন্ধ দেখতে পান। গেটের দারোয়ান তাঁকে বলেছেন, আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে সরকারি ছুটি। অন্যদিন আসতে।
দারোয়ানের এ কথায় চিন্তায় পড়ে যান রুহুল আমিন। কারণ, রাতেই যে ফ্লাইট। কোয়ারেন্টিনের টাকা দিতে না পারলে উড়োজাহাজে উঠতে পারবেন না। ফলে কয়েকবার সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এখন কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। কারণ, তিনি কুমিল্লা থেকে তল্পিতল্পা গুছিয়ে ঢাকায় এসেছেন। বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়েও এসেছেন।
আজ দুপুর আড়াইটার দিকে সৌদি এয়ারলাইনসের গেটের সামনের ফুটপাতে বসে ছিলেন রুহুল আমিন। সে সময় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার রাতে ফ্লাইট। অথচ, চারদিকে ছোটাছুটি করেও কোয়ারেন্টিনের ৬০ হাজার টাকা জমা দিতে পারিনি। এখান থেকে বলা হচ্ছে, আজ আর হবে না। অন্য সময় আসতে বলছে গেটের দারোয়ান। দারোয়ান ছাড়া এয়ারলাইনসের কোনো কর্মকর্তাও আজ আসেনি। কারণ হিসেবে সরকারি ছুটিকে দেখাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বলা হয়েছিল, ফ্লাইটের দিনে এসে টাকা জমা দিতে।’
রুহুল আমিন আরও বলেন, ‘কোনো উপায় না দেখে এখন সবকিছু গুছিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে যাব। দেখি সেখানে গিয়ে কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা। আর যদি না করা যায়, তাহলে আবার কাল সকালে এখানে ফিরে আসব। আসলে এই রাষ্ট্র আমাদের একটুও সম্মান করে না। অথচ, আমরা কত কষ্ট করে টাকা পাঠাই দেশে। দেড় মাস আগে ছুটিতে দেশে এসেছিলাম। এখন আটকে গেছি।’
শুধু রুহুল আমিন নন, এমন শত শত মানুষ আজ সকাল থেকে ভিড় জমান সৌদি এয়ারলাইনসের সামনে। যাদের মধ্যে কেউ তাদের কাজ মেটাতে পারেননি। এদের মধ্যে শাওন হাওলাদার একজন। তিনিও সকালে মাদারীপুর থেকে এসেছেন হোটেলে কোয়ারেন্টিনের জন্য টাকা জমা দিতে।
কথা প্রসঙ্গে শাওন হাওলাদার বলছিলেন, ‘সোমবার আমি মাদারীপুর থেকে এসেছিলাম কোয়ারেন্টিনের টাকা জমা দিতে। ওইদিন আমাকে বলা হয়েছিল, যেদিন ফ্লাইট সেদিন আসতে। আমি তখন আজকের ফ্লাইটের কথা জানিয়েছিলাম। পরে আমাকে আজই আসতে বলা হয়েছিল। পরে আমি আবার মাদারীপুর ফিরে গিয়েছিলাম।’
শাওন হাওলাদার বলেন, ‘আমি সকালে আবার মাদারীপুর থেকে এখানে এসেছি। আজ আমাকে বলা হলো, আজ হবে না। তার মানে কী? আমাকে আগে কী জানানো হলো, আর এখন কী বলা হচ্ছে! আমার আজ রাত আড়াইটার সময় সৌদির টিকেট কাটা। আমি কোয়ারেন্টিনের টাকা জমা না দিতে পারলে আমাকে প্লেনেই তুলবে না। কী এক মহাবিপদে পড়লাম। যদিও শুনলাম, আমাদের জন্য আবার টিকেট কাটার ব্যবস্থা সরকারই করবে। তারপরও আমাকে খুব ভোগান্তিতে ফেলা হলো।’
রানা মিয়া নামের আরেকজন এসেছেন কুষ্টিয়া থেকে। তিনিও জেদ্দায় যাবেন। আগামীকাল বিকেলে তাঁর ফ্লাইট। আজ এসেছেন সব কিছু ঠিক করে নিতে। গত সোমবার রাতে তিনি করোনার নমুনার নেগেটিভ রিপোর্ট পেয়েছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাতে ওই রিপোর্টের মেয়াদ শেষ হবে। রানা মিয়া বলছিলেন, ‘কাল যদি কোনোভাবে ফ্লাইট না পাই তাহলে আমার আবার নতুন করে করোনার রিপোর্ট লাগবে। কারণ, পরীক্ষার তিনদিন পর্যন্ত এ রিপোর্টের মেয়াদ থাকে। এদিকে কোয়ারেন্টিনের জন্য টাকা জমা দিতে পারলাম না। কী হবে জানি না।’
এর আগে গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সৌদি আরবগামী যাত্রীদের জন্য কতিপয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উপ-মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনা বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মামগামী যাত্রীরা যাত্রা শুরুর কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা আগে কোয়ারেন্টিন হোটেলসহ প্যাকেজ নিশ্চিত করতে হবে।
টিকেট ও কোয়ারেন্টিন প্যাকেজ নিশ্চিত হওয়ার পর সম্মানিত যাত্রীকে ফ্লাইট সৌদি আরবে অবতরণ করা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর পরীক্ষার স্যাম্পল প্রদান ও রিপোর্ট সংগ্রহের অনুরোধ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া কিছু যাত্রীর কোয়ারেন্টিন হোটেল প্রয়োজন হবে না।
অনাবাসিক (নন রেসিডেন্ট) এবং প্রথমবারের জন্য দর্শনার্থীরা যারা কোভিড-১৯-এর টিকার উভয় ডোজ গ্রহণ করেছেন এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার ১৪ দিন শেষ করেছেন। তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে টিকা গ্রহণের প্রমাণপত্র/সার্টিফিকেট সঙ্গে রাখতে হবে।