সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী আজ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী আজ রোববার। এ উপলক্ষে ১৫ দিনের কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো।
এবার এমন এক সময়ে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে যখন তাঁর স্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। বড় ছেলে তারেক রহমান ও ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর পরিবার দেশের বাইরে অবস্থান করছে।
বহুদলীয় গণতন্ত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং উৎপাদনমুখী রাজনীতির প্রবক্তা হিসেবে জিয়াউর রহমান পরিচিতি পেয়েছিলেন অতি অল্প সময়ে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ‘বীর উত্তম’ খেতাব পেয়েছিলেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল। তার পরের বছর ১ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করে জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বিএনপি।
জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার গাবতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম ছিল ‘কমল’। বাবা মনসুরুর রহমান ও মা জাহানারা খাতুনের দ্বিতীয় ছেলে কমল ছোটবেলা থেকেই লাজুক ও গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাদে কলকাতার হেয়ার স্কুলে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে বাবার সঙ্গে করাচি চলে যান তিনি। জিয়াউর রহমান ছিলেন মেধাবী ছাত্র। ১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং কমিশন পান ১৯৫৫ সালে। ১৯৬৬ সালে তিনি কাকুলে পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে পরিদর্শক হন এবং একই বছর শেষদিকে কোয়েটা স্টাফ কলেজে যোগ দেন। ১৯৭০ সালের অক্টোবরে নবগঠিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দায়িত্ব দিয়ে তাঁকে পাঠানো হয় চট্টগ্রামে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খালকাটা কর্মসূচি, সবুজ বিপ্লব, শিল্প উন্নয়ন, যুগোপযোগী ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশের ভিত রচনা করেন। জাতীয় মহিলা সংস্থা প্রতিষ্ঠাসহ নারী সমাজের উন্নয়ন ও শিশুদের বিকাশে তাঁর আগ্রহ জাতিকে নতুন দিক-নির্দেশনা দেয়। তাঁর সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জিয়াউর রহমান একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃত। মুসলিম বিশ্বে, জোট নিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদ্দীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে জিয়াউর রহমান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে এক মর্যাদাবান রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন।
‘ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়’
জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শহীদ জিয়া প্রবর্তিত কালজয়ী দর্শন ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ ও তাঁর অবিনাশী আদর্শ এদেশের মানুষকে উদ্দীপ্ত করে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রকে সুরক্ষার এবং উৎপাদন ও অগ্রগতি তরান্বিত করার।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতির ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব ছিল অবিস্মরণীয়। তিনি সব সংকটে দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতার ঐতিহাসিক ঘোষণা, স্বাধীনতা যুদ্ধের ময়দানে বীরোচিত ভূমিকা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে তাঁর অনবদ্য অবদানের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।’
‘স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তহীনতায় দেশের মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা সারা জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উজ্জীবিত করেছে। এই ঘোষণায় দেশের তরুণ, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষ মরণপণ যুদ্ধে সামিল হয়’, যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
দলীয় কর্মসূচি
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। যা শনিবার থেকে শুরু হয়েছে।
রোববারের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ভোর ৬টায় দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ।
শনিবার বিএনপির কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় দলের মহাসচিবসহ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের সমাধি সৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও মাজার জিয়ারত করবেন।
দুপুর ১টায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এবং সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পর্যায়ক্রমে পুষ্পার্ঘ অর্পণ ও মাজার জিয়ারত করবে।