মুন্সীগঞ্জে গৃহহীনদের ঘর নির্মাণে অনিয়ম, দুই কর্মকর্তা ওএসডি
মুজিববর্ষ উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে দুই কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।
ওএসডি করা কর্মকর্তারা হলেন সদর উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত শিপলু এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাহ উল সাবরিন।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে আধারা এবং শিলই ইউনিয়নে ২০০ পরিবারর জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব পরিবার শিগগিরই নিজের ঠিকানা আর মাথাগোঁজার ঠাঁই পাবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ১৭৬টি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে এসেছে। কিন্তু সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভুতভাবে ঠিকাদার নিয়োগ, নিম্নমানের মালামাল কেনাসহ নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত হায়াত শিপলু এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ মেজবাহ উল সাবরিনকে ওএসডি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া কমিটির অপরাপর সদস্যদর সম্পর্কও তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের কালিরচর (ভাষানচর) এলাকায় ২০০ পরিবারের জন্য বিনামূল্যে জমিসহ বসতঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে তিনটি কক্ষ এবং বারান্দাসহ সংযুক্ত টয়লেট। থাকছে পানি আর বিদ্যুতের ব্যবস্থা।
এই প্রকল্প এলাকায় দেখা হয় কালিরচর এলাকার মুনসুরে সঙ্গে। স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে কালিরচর থাকেন মুনসুর। মোহনপুরের পৈত্রিক ভিটা হারিয়ে ২২ বছর ধরে অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকছেন। এজন্য শুনতে হয়েছে নানা গঞ্জনা। আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘর পেলে এসব লাঞ্ছনা-থেকে মুক্তি মিলবে। তাই প্রতিদিন আসেন তিনি কাজ তদারকি করতে আসা নতুন স্যারের (নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) নির্দেশে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মুনসুরের মতো আরও ২০০ পরিবার নিজের একটা ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছে। অশ্রুসজল চোখে মনসুর কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
প্রকল্প সূত্র জানা যায়, সর্বমোট তিন কাটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ১৫৬টি ঘরের অবকাঠামো সমাপ্ত হয়েছে। গত মার্চ মাস থেকে নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে সরকারি নির্দশনা অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি), আধারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতাসহ (সদস্য সচিব) পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টিতে প্রকল্পের তিন দিকের মাটি সরে গেছে। সাময়িক বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এখনই চারদিকে প্যারাসাইটিং না করলে ঘর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে হেলে পড়বে। এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৭৬টি ঘরের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ কাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
অভিযোগে জানা যায়, নিয়মবহির্ভুতভাবে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার রুবায়েত হায়াত শিপলু নির্মাণ কাজের জন্য জনৈক আজাদ মুন্সীকে ঠিকাদার নিয়োগ করেন। ঠিকাদার প্রাক্কলন অনুযায়ী নির্মাণ কাজ না করে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ায় মহৎ এ প্রকল্পটি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
নির্মাণ কাজ অনিয়মের বিষয় জানতে চাইলে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হামিদুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। তিনি গত ১৮ এপ্রিল কাজে যোগদান করে প্রকল্প কমিটির কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে যান। সেখান নির্মাণ কাজ বেশকিছু অনিয়ম দেখতে পান। ঠিকাদারকে প্রাক্কলন অনুযায়ী নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। এছাড়া উপকারভোগীদের নির্মাণাধীন ঘর দ্রুত দেখাশোনার জন্য বলেন।
ঘরে নিম্নমানের টিন ব্যবহার সম্পর্ক ইউএনও বলেন, ‘যথাযথ প্রক্রিয়ায় মান যাচাই করে তা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। আর উন্নয়ন কাজ চূড়ান্ত হস্তান্তরের আগে বিগত সময় অনাকাঙ্ক্ষিত অনিয়ম সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘আগের নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদার ঘরপ্রতি নির্মাণ মজুরি ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাই ৩৫ হাজার টাকা চুক্তিতে এখন ভিন্ন লোকদের ঘর নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য আধারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শামসুল কবীর বলেন, ‘গত মাসে নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার প্রকল্প এলাকায় এলে আমাকে থাকতে বলা হয়। তখন জানতে পারি আমি এ প্রকল্পের একজন সদস্য।’
অনিয়মের ব্যাপারে প্রকল্প কমিটির সদস্য সচিব ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েছে বলে স্বীকার করেন এবং অনিয়মগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান।