নারায়ণগঞ্জে অগ্নিকাণ্ড : ডিএনএ পরীক্ষার পর লাশ পাবে স্বজনরা
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ গ্রুপের কারখানার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশগুলো রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। আজ শুক্রবার বিকেলে পাঁচটি লাশবাহী গাড়িতে করে লাশগুলো আনা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে মোট ৫২ জনের প্রাণহানী ঘটে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে তিনজন মারা যান আর আজ ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।
ঢামেক মর্গে লাশগুলো নিয়ে আসার পর থেকে সেখানে বাড়তে থাকে স্বজনদের উপস্থিতি। স্বজনদের উপস্থিতি আর তাদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে মর্গের বাতাস। মর্গে স্বজনরা ছবি নিয়ে এসে আকুতি জানাচ্ছে প্রিয়জনের লাশটি ফিরে পেতে। কিন্তু লাশগুলোকে চেনা যাচ্ছে না অতিরিক্ত পুড়ে যাওয়ার কারণে।
ফলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) নিহতদের স্বজনদের কাছ থেকে ডিএনএ-এর নমুনা সংগ্রহ করা শুরু করেছে। ঢামেক মর্গে আসা স্বজনদের কাছ থেকে এ নমুনা নেওয়া হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্বজনদের কাছে লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন সিআইডির ডিএনএ ফরেনসিক ল্যাবের সদস্যরা।
ফরেনসিক ল্যাবের সহকারী অ্যানালিস্ট আশরাফুল আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা ঢামেক মর্গে আসা স্বজনদের কাছ থেকে নমুনা নিচ্ছি। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে। নমুনা পরীক্ষার পর লাশ চিহ্নিত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। পরে আজ ফায়ার সার্ভিস থেকে জানানো হয়, ছয়তলা ভবনজুড়ে বিভিন্ন কাঁচামাল থাকায় আগুন ভয়াবহ হয়ে উঠে। সেই লেলিহান শিখা দ্রুতই কারখানার দুটি ইমারজেন্সি গেট (জরুরি বা বিকল্প বহির্গমন পথ) পর্যন্ত প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আর এর ফলে শ্রমিকরা যেমন কারখানার উপরতলা বা নীচতলায় উঠতে-নামতে পারেনি। ঠিক তেমনি ইমারজেন্সি গেট ব্যবহার করে বেরও হতে পারেনি। অবরুদ্ধ অবস্থায় থেকেই ধোঁয়া আর অগ্নিকাণ্ডে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা ফায়ার সার্ভিসের।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ৪৯টা ডেডবডি শনাক্ত করেছি। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। কোনো আত্মীয়-স্বজন যদি নিঁখোজ মনে করেন, তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অনুরোধ থাকবে, তারা যেন ঢাকা মেডিকেলে যোগাযোগ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে লাশ শনাক্ত করার জন্য আমাদের ফায়ার সার্ভিস, জেলা প্রশাসন, পুলিশ সবার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি আছে। ওখানে আমাদের যে সরকারি নিয়ম রয়েছে সেগুলো সম্পন্ন শেষে আত্মীয়-স্বজনের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।’
সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি
কারখানায় এই অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানীর ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এ কমিটিকে আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আজ দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শামীম বেপারীকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি চাইলে আরও লোক নিতে পারবে। যদি তারা মনে করেন, পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের লোক নিবে নিতে পারবে।’
নিহতের পরিবার পাবে দুই লাখ টাকা
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে শ্রম কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে দুই লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিকদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান।