চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির পশুর হাট বসছে কাল
চট্টগ্রামে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামীকাল সোমবার (১২ জুলাই) থেকে কোরবানির পশুর হাটে শুরু হবে বেচাকেনা।
তবে, নভেল করোনাভাইরাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের মধ্যে অনলাইন অথবা পাড়ায় পাড়ায় কোরবানির পশুর হাটকে অধিকতর নিরাপদ মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সচেতন জনগোষ্ঠী। তাঁরা বলছেন, এতে লকডাউন ভেঙে ক্রেতাকে যেমন দূরে পশুর হাটে যেতে হবে না, তেমনি বেশি জনসমাগম বা লোকজনের ভিড় এড়ানোও সম্ভব হবে।
বাকলিয়া, বহদ্দারহাট ও চকবাজারে তিনটি সীমিত গরুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, এরই মধ্যে কিছু কিছু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এসব স্থানে রাখা গরুর মালিকেরা বলেছেন, দিনে কয়েকজন করে ক্রেতা আসেন। দরদামে বনিবনা হলে গরু নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ দাম পরিশোধ করে দিয়ে গরু তাদের তাঁবুতে রেখে দিচ্ছেন।
ব্যাবসায়ীরা বলেন, সচেতন মানুষ এখন ভিড় এড়িয়ে চলতে চান। তাই আগেভাগে আমাদের মতো কম গরুর তাঁবুতে আসছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাড়ার হাটে পশুর বেচাবিক্রি বেশি বলে মনে হচ্ছে। তবে, এসব কোরবানিদাতাদের বড় গরুর দিকে ঝোঁক কম।
জানা যায়, আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে এবার নগরীতে বসবে ছয়টি পশুর হাট। তিনটি স্থায়ী এবং তিনটি অস্থায়ী। এরই মধ্যে হাটগুলোতে ইজারাদার নিয়োগ দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। আগামীকাল থেকে এসব হাটে শুরু হবে বেচাকেনা। প্রশাসনের বক্তব্য অনুযায়ী, হাটে অবশ্যই স্বাস্থবিধি অনুসরণ করতে হবে, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইজারাদারেরা এরই মধ্যে বাজারগুলো পশু বেচাকেনার জন্য প্রস্তুতও করে তুলেছেন।
প্রতিবছর নগরীতে অন্তত সাতটি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর জন্য অনুমতি দিলেও প্রশাসন এবার দিয়েছে তিনটি। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলা করোনা প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটির বৈঠকে করোনার প্রকোপ বিবেচনায় আরও বেশি স্থানে পশু বেচাকেনার অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘কোরবানির পশুর হাট বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছিলাম আমরা। হাট যত বেশি হবে, মানুষের ভিড় তত কম হওয়ার কথা। এ ছাড়া অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনার উদ্যোগ নিলে খুবই ইতিবাচক হতো। এতে শারীরিক সংস্পর্শ এড়ানো যেত।’
সিভিল সার্জন আরও বলেন, ‘বর্তমান ব্যবস্থায় ঝুঁকি বাড়বে। গত রমজানের সময় স্বাস্থ্য বিভাগের আশঙ্কার বিষয়টি সাধারণ মানুষকে বোঝানো যায়নি। ফলে এখন আমাদের এর চরম মাশুল দিতে হচ্ছে। ঈদুল আজহায়ও যদি হাটে বেশি ভিড় হয়, তাহলে করোনাভাইরাস আরও বেশি ছড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে। এ অবস্থায় হাটে যত বেশি স্বাস্থ্যবিধি মানানো যাবে, তত মঙ্গল। পাশাপাশি হাটের বাইরে এক বা একাধিক ডিসপ্লে বোর্ড দেওয়া যেতে পারে যেখানে পুরো হাটের একটি সামগ্রিক চিত্র থাকবে। কোন স্থানে কত বাজেটের পশু রাখা হয়েছে, এ বোর্ড থেকে ক্রেতারা জানতে পারবে এবং সর্বত্র ঘোরাঘুরির বদলে ওই নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে ক্রেতারা পছন্দের ও বাজেটের পশু কিনে নিতে পারবে। এভাবে কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে ভিড় এড়ানো সম্ভব হবে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও বিশিষ্ট নৃ-বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বৈশ্বিক ও দেশীয় প্রেক্ষাপটে এখন অনলাইন পশুর হাটই সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হতে পারে। দেড় বছর ধরে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে শুরু করে তৈরি খাদ্যপণ্যও অনলাইনে কিনতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠছেন। করোনার ঝুঁকি এড়াতে পশুও অনলাইনে কেনা গেলে অনেক বেশি নিরাপদ হতে পারে।’
ড. ফরিদ আরও বলেন, ‘অনলাইনে পুরোপুরি সম্ভব না হলে সীমিত সংখ্যক পশু নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পশু বেচাকেনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেহেতু লকডাউন রয়েছে, তাই যানজটের আশঙ্কাও নেই। কোরবানিদাতা তার নিকটস্থ ছোট বাজার থেকে পছন্দের পশু নিতে পারবেন।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) চিফ রেভিনিউ অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আটটি অস্থায়ী স্থানে হাট বসানোর অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু, জেলা প্রশাসন আমাদের তিনটির অনুমতি দিয়েছে। আমরাও তিনটি ইজারা দিয়েছি। আমি মনে করি হাট বেশি হলে জনসমাগম কম হতো। এতে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মানানোর সুযোগ বেশি থাকত।’
তবে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পাড়ায় পাড়ায় হাট বসতে দেব না। অননুমোদিত কোনো স্থানে পশুর হাটকে আমরা প্রশ্রয় দিতে পারি না।’
সরেজমিন দেখা গেছে, স্থায়ী তিনটি হাটের পাশাপাশি অস্থায়ী হাটগুলো পশু বেচাকেনার উপযোগী করে তোলা হয়েছে। নুরনগর হাউজিং, সল্টগোলা রেল ক্রসিংয়ের ইশান মিস্ত্রি হাট ও কাটগড় বাটারফ্লাই পার্কসংলগ্ন মাঠে খুঁটি পোতা ও তাঁবু টানানোর কাজ শেষ হয়েছে। আগামীকাল থেকে এসব হাটে শুরু হবে কোরবানির পশু বেচাকেনা।
এদিকে, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) জানিয়েছে, পশুর হাটের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের ব্যাপারে তারা কঠোর ভূমিকা পালন করবে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হাটে বসবে পুলিশের কন্ট্রোল রুম। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতনতায় করা হবে মাইকিং। গত বছরের মতো এবারও তিন স্তরের নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সিএমপি। যদি প্রয়োজন হয় আরও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হবে।
সিএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আরাফাতুল ইসলাম বলেছেন, ‘চসিকের পক্ষ থেকে ছয়টি অনুমোদন দেয়া হলেও এখনও চূড়ান্ত হয়নি এবার কয়টি পশুর হাট বসবে। হাটের সংখ্যা বাড়বে নাকি পাড়া-মহল্লায় সীমিত পরিসরে হবে পশুর হাট সে বিষয়ে লকডাউনের পরে সিদ্ধান্ত হবে।’