‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ : সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ডাকটিকেট অবমুক্ত
মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল সংগ্রহে জর্জ হ্যারিসনের ঐতিহাসিক ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর সুবর্ণজয়ন্তী আজ (১ আগস্ট)। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্য করতে, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে এ ধরনের বড় একটি অনুষ্ঠান বিশ্বে প্রথমবারের মতো হয়েছিল। নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে পণ্ডিত রবিশঙ্করের প্রচেষ্টায় এই অনুষ্ঠানটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। দিবসটি উপলক্ষে ডাক অধিদপ্তর স্মারক ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম ও ডাটাকার্ড প্রকাশ করেছে।
আজ রোববার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তাঁর দপ্তর থেকে এ বিষয়ে ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকেট এবং ১০ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত করেন। এ ছাড়া পাঁচ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটাকার্ড অবমুক্ত করা হয়। মন্ত্রী এ সংক্রান্ত একটি সিলমোহর ব্যবহার করেন। তিনি এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর গানের মূল কথাই ছিল বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, গানের কথায় এমন আবেদন ছিল যে—‘সকলের কাছে মিনতি জানাই আজ আমি তাই/ কয়েকটি প্রাণ এসো না বাঁচাই’ বা ‘এত যে বেদনা রাখি দূরে/ দেবে না তোমার ক্ষুধিতকে রুটি সামান্য দুটি/ অথবা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ/ দেখছি সেখানে সকলই ধ্বংস/ কত শত প্রাণ মরে নিঃশেষ/ দেখিনি এমন বেদনা অশেষ/ বাংলাদেশ বাংলাদেশ’।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর বড় আকর্ষণ ছিলেন জর্জ হ্যারিসন ও বব ডিলান। জর্জ হ্যারিসন আটটি গান গেয়েছিলেন। বব ডিলান গেয়েছিলেন পাঁচটি গান। রিঙ্গো স্টার ও বিলি প্রেস্টন একটি করে গান করেছিলেন। লিওন রাসেল একটি একক এবং ডন প্রেস্টনের সঙ্গে একটি গান করেছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষে জর্জ হ্যারিসন গেয়েছিলেন তার সেই অবিস্মরণীয় গান ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। গানটি জর্জ হ্যারিসনের নিজের লেখা এবং সুর করা। গানের মূল কথাই ছিল বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আরও বলেন, জর্জ হ্যারিসন পুরো গানটা উচ্চস্বরে করুণ বিলাপের সুরে গভীর মানবিক ও বিপ্লবী আবেদন নিয়ে গেয়েছিলেন। দর্শক-শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আবেগে অশ্রুসিক্ত হয়েছিল। সেদিনই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি স্বাধীনতা পাওয়ার আগেই স্বতন্ত্র দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছিল। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নাম শুনেছিল, জেনেছিল সেদিনের চলমান মুক্তিযুদ্ধের কথা, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলার কথা।
‘আই, মি, মাইন’ বইয়ে জর্জ হ্যারিসনের লেখার উদ্ধৃতি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, হ্যারিসন লিখেছেন ‘মোদ্দা কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের ঘটনাবলির ব্যাপারে আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমরা যখন কনসার্টের প্রস্তুতি নিচ্ছি, মার্কিনরা তখন পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠাচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মৃত্যু হচ্ছে, কিন্তু সংবাদপত্রে শুধু কয়েক লাইন, “ও, হ্যাঁ, এখনও এটা চলছে।” আমরা ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছিলাম। এখনও বাঙালি রেস্তোরাঁয় এমন সব ওয়েটারের সঙ্গে আমার দেখা হয়, যাঁরা বলেন, “ওহ্, মিস্টার হ্যারিসন, আমরা যখন জঙ্গলে লড়াই করছিলাম, তখন বাইরে কেউ আমাদের কথা ভাবছে, এটা জানাটাও আমাদের জন্য ছিল অনেক কিছু।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কনসার্ট ফর বাংলাদেশ একটি অসাধারণ গৌরবোজ্জ্বল অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক ঘটনা। স্মারক ডাকটিকেট, উদ্বোধনী খাম ও ডাটাকার্ড গত বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা জিপিও’র ফিলাটেলিক ব্যুরো এবং পরে দেশের অন্যান্য জিপিও এবং প্রধান ডাকঘর থেকে সংগ্রহ করা যাবে।