অব্যবস্থাপনায় মানুষ করোনা পরীক্ষা করাতে পারছে না : মির্জা ফখরুল
সরকারের নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে বেশির ভাগ কোভিডে আক্রান্ত মানুষ পরীক্ষা করাতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে জানানোর জন্যই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সভার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ভারতীয় ডেলটা ধরন সারা দেশে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমিতের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ডেলটা ধরন সংক্রমণের হার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ কোভিড পরীক্ষার জন্য জেলা হাসপাতাল ও পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছে, কিন্তু সরকারের নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে বেশির ভাগ কোভিডে আক্রান্ত মানুষ টেস্ট করাতে পারছে না। শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা টেস্টের ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। যার ফলে দেশের মানুষের কাছে সঠিক তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে না। অন্যদিকে, সংক্রমিত ব্যক্তিরা হাসপাতালে কোনো বেড পাচ্ছে না, অক্সিজেন পাচ্ছে না। করোনা সংক্রান্ত জটিল রোগী ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ব্যক্তি অক্সিজেন আইসিইউ বেড পাচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে করোনা সংক্রমিত রোগীরা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে মৃত্যুবরণ করছে। জেলা হাসপাতালগুলোতে পরিস্থিতি উন্নত করবার কোনো প্রচেষ্টা সরকারের নেই। অন্যদিকে ঢাকায় কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত রোগীর চাপে চরম অব্যবস্থপনা দেখা দিয়েছে।
সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংক্রমণের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যার প্রকৃত তথ্য না দিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। হাসপাতালে সংবাদকর্মীদের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট মামলার ভয়ে সংবাদকর্মীরা প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে পারছেন না। অন্যদিকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, সব নাগরিককে টিকা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ সরকার এখন পর্যন্ত জনগণের সামনে দিতে পারেনি। তিনি বলেন, সরকার অবলীলায় জনগণকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতারণা করছে। একদিকে সরকার বলছে প্রতি সপ্তাহে ৬০ লাখ টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে অথচ গত ৭ মাসেও ৬০ লাখ টিকা দিতে পারেনি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকার টিকা প্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা ছাড়াই প্রতি মাসে এক কোটি টিকা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। যা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ব্যতীত কিছুই নয়। তিনি বলেন, প্রতি মাসে এক কোটি টিকা প্রদানের জন্য টিকাপ্রাপ্তির উৎস সরকার এখন পর্যন্ত জানাতে পারেনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই সব উক্তি এখন হাস্যকর হয়ে উঠেছে। এগুলো যে ফাঁকা বুলি এটা বুঝতে আর জনগণের কোনো বাকি নেই। এসব ফাঁকা বুলি না আওড়িয়ে অবিলম্বে আবারও টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, অপরিকল্পিত লকডাউনে জনগণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বিএনপি এর আগে অনেকবার বলেছে যে, দিন আনে দিন খায় মানুষ, প্রান্তিক মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিক, পরিবহণশ্রমিক, মাঝি, রিকশাশ্রমিক, ভ্যানশ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা ব্যতীত লকডাউন কখনই কার্যকর হবে না। সেজন্যেই বিএনপি এসব মানুষের জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান হিসাবে প্রদানের প্রস্তাব করেছিলো। সরকার সেদিকে না গিয়ে দলীয় লোকদের আড়াই হাজার টাকা করে প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রকৃত দুর্গত মানুষের কাছে এই সহযোগিতা পৌঁছাচ্ছে না। উপরন্তু হঠাৎ রপ্তানীমুখী কলকারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিকেরা আরও মারাত্মক ভোগান্তির সম্মুখীন হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, একদিকে গণপরিবহণ বন্ধ অন্যদিকে কারখানায় কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশে তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রায় সব বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, এটা প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। অন্যদিকে ঢাকার বাইরের এই শ্রমিকরা এবং ঢাকার জনগণ ডেলটা ধরনের ভয়াবহ সংক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।
দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অযোগ্যতা, দুর্নীতিপরায়নতা এবং আন্তরিকতার চরম অভাবে এই সব আত্মহননকারী সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চরম ব্যর্থতার জন্য সব দায়-দায়িত্ব নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।