হাশেম ফুডসের কারখানায় অগ্নিকাণ্ড : অনিয়ম-গাফিলতি তুলে ধরে তদন্ত প্রতিবেদন
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের হাশেম ফুডস লিমিটেডের সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জনের প্রাণহানির ঘটনায় প্রতিবেদন দাখিল করেছে জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি। কারখানাটি ভবন নির্মাণ নীতিমালা (বিল্ডিং কোড) না মেনেই তৈরি করা হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়, ওই কারখানায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা ফায়ার সার্ভিসের নো অবজেকশন সার্টিফিকেটও (এনওসি) ছিল না।
প্রতিবেদনে কারখানার মালিকের অনিয়ম ও সরকারি সংস্থার গাফিলতি উল্লেখ ছাড়াও ২০টি সুপারিশ করা হয়েছে। শিশু শ্রম বন্ধ করা, মৃত শ্রমিকদের পরিবারের ক্ষতিপূরণের জন্য শ্রম আইন অনুযায়ী দুই লাখ টাকা এবং যারা আহত হয়েছে, তাদের চিকিৎসার জন্য আড়াই লাখ টাকা করে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক জানান, তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী ৫ আগস্ট রাতে ৪৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। শ্রম অধিদপ্তর এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের গাফলতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অবগত করবে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, কারখানার নিচ তলার সেন্ট্রাল রুমে শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জের ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডসের এই কারখানায় আগুন লাগে। আগুন লাগার পরপরই মিনা আক্তার (৪০) ও স্বপ্না রানী নামের দুই শ্রমিকের লাশ কারখানা থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে মুরসালিন (২২) নামের এক কর্মী রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি আগুন লাগার পর তিনতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছিলেন। পরদিন ৯ জুলাই দুপুরে কারখানা থেকে উদ্ধার করা হয় ৪৯টি লাশ। লাশগুলো পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে আসা হয়। এরই মধ্যে ৪৫ জনের লাশ পরিচয় শনাক্ত করার পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গত ১৪ জুলাই সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাশেমসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেই দিনই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। শুনানি শেষে বিচারক ফাহমিদা খানম প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাশেম, তাঁর চার ছেলে হাসিব বিন হাশেম, তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম ও তানজীম ইব্রাহীম এবং প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহান শাহ আজাদ, হাশেম ফুড লিমিটেডের ডিজিএম মামুনুর রশিদ ও অ্যাডমিন প্রধান সালাউদ্দিন।
পরে পুলিশের করা হত্যা মামলায় ১৯ জুলাই কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ তিন জনকে জামিন দেন আদালত। ওই দিন বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিসুর রহমান তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন হাশেম ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান আবুল হাশেম এবং তাঁর দুই ছেলে হাসিব বিন হাশেম ও তারেক ইব্রাহীম।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতে ছয় আসামির জামিন আবেদন করলে বিচারক তিন জনের জামিন দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুজ্জামান বুলবুল জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে আসামিদের জামিন আবেদন বিরোধিতা করেছে। আদালত শুনানি শেষে ওই তিন জনের জামিন দিয়েছেন।
এর আগে একই মামলায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানসহ চার দিনের রিমান্ড শেষে ১৪ জুলাই বুধবার বিকেলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে হাজির করা হলে ছয় আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে চেয়ারম্যানের দুই ছেলে তাওসিফ ইব্রাহিম ও তানজিম ইব্রাহিমের জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হয়।