কৃষক ও ভোক্তা উভয়কেই বাঁচাতে চাই : খাদ্যমন্ত্রী
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, আমরা যেমন কৃষক বাঁচাতে চাই, তেমনি নিম্ন আয়ের ভোক্তাকেও বাঁচাতে চাই। তাই বলে ১৮ (২০১৮) সালের হিসাবে চাল খেতে চাইলে হবে না। ১৮ সালের হিসাবে চাল খেতে চাইলে আবারও জিরো ট্যাক্সে (শুল্কমুক্ত) চাল আমদানি করতে হবে। তখন বাজারে ধানের দাম ৫০০-৭০০ টাকা নেমে যাবে। কৃষক মরে যাবে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহার সিএসডি (সেন্ট্রাল সাপ্লাই ডিপো) খাদ্যগুদাম পরিদর্শনে গিয়ে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আঠারো সালের মতো শুল্কমুক্ত হারে চাল আমদানির সুযোগ করে দিলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে নেমে আসবে, ধানের দাম নেমে আসবে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। তখন আজকে চালের দাম বেড়ে গেছে বলে যারা সমালোচনা করছেন, তখন তারাই আবার বলবে কৃষকেরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সতেরো ও আঠারো সালে যখন ধানের দাম কম ছিল তখন কৃষকেরা ধান উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল। উৎপাদন অনেক কমে গিয়েছিল। অথচ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গত বছর এবং এ বছর ধানের উৎপাদন বেড়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে ধানের দাম বেশি থাকার কারণে।’
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ভোক্তারা যাতে গ্রহণযোগ্য দরে চাল কিনতে পারে সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে ২৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ থেকে ১৭ আগস্টের পরেই বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি শুরু হয়ে যাবে। আমন ধান ওঠার আগ পর্যন্ত এই আমদানি চলবে। আমন ধান বাজারে এলে কৃষকেরা যাতে ধানের দাম পান সেই লক্ষ্যে আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি ছাড়াও অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরুর কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এক শ্রেণির নব্য মজুতদার তৈরি হয়েছে, যারা আগে কখনো ধান-চালের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। করোনা পরিস্থিতির কারণে অন্য অনেক ব্যবসা বন্ধ থাকায়, যাদের কাছে টাকা রয়েছে তারা ধান-চাল মজুতের ব্যবসা শুরু করেছেন। এমনও অনেক উদাহরণ রয়েছেন, একজন শিক্ষক, যার কিছু টাকা জমা রয়েছে, তিনিও নিজের বাড়িতে কিছু ধান কিনে রেখেছেন। আবার করোনার সময়ে কাপড়ের ব্যবসা বন্ধ থাকায় অনেক কাপড় ব্যবসায়ী ধান-চাল মজুতের ব্যবসায় নেমে পড়েছেন। যে সমস্ত মিল ব্যবসায়ী পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার বাইরে গুদামে চাল মজুত করে রেখেছেন এবং যে সমস্ত নব্য মজুতদার অবৈধভাবে চাল মজুত করে রাখছেন তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে আজ থেকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ সমস্ত অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টে জরিমানা ছাড়াও প্রয়োজনে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
সান্তাহার সিএসডি খাদ্যগুদাম পরিদর্শন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে রাজশাহীর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিএম ফারুক হোসেন পাটওয়ারী, নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবীর, বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুজ্জামান, আদমদিঘী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায়, বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোতাহার আলী, সান্তাহার সিএসডির ব্যবস্থাপক দুলাল উদ্দিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।