ছবি এঁকে, গান, আবৃত্তি ও কথামালায় পিপল’স ভয়েসের প্রতিবাদ
পরিবেশবাদী সংগঠন পিপল’স ভয়েসের ব্যতিক্রমী আয়োজনে ছবি এঁকে, গান, আবৃত্তি ও কথামালায় সিআরবি রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শিল্পীর তুলিতে সিআরবির সবুজ যখন ফুটে ওঠে শিল্পী কণ্ঠে তখন প্রতিবাদী গান ‘এন্ডে তোয়ারা হাসপাতাল বানাইলে আঁরা বাইচ্চুম কেন গরি’। কথামালায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ জানালেন, হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত চলবে চট্টগ্রামবাসীর আন্দোলন। এভাবে আবৃত্তি, গানে, ছবিতে ও প্রতিবাদে মুখর ছিল সিআরবি সাত রাস্তার মোড়।
এর আগেও গত মাসে সিআরবি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার দাবিতে শতবর্ষী বৃক্ষে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নামফলক স্থাপনের কর্মসূচি পালন করেছিল পিপল’স ভয়েস।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাত রাস্তার মোড়ে পিপল’স ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারী নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, পরিবেশবিদ ড. মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শুকলাল দাশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল, জ্যেষ্ঠ শিল্পী গৌতম পাল, চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক কাজল দেবনাথ, বাসদ নেতা মহিন উদ্দিন, লেখক তুষার কান্তি বসাক, সাংস্কৃতিক সংগঠক সুনীল ধর, সাংবাদিক প্রীতম দাশ, পিপল’স ভয়েসের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আতিকুর রহমান।
সকাল থেকে সিআরবির শিরীষ তলাসহ বিভিন্ন স্থানে জল রঙে ছবি আঁকেন গৌতম পাল, শিল্পী কাজল দেবনাথ, প্রিয়াস বিশ্বাস, সামাচিং মারমা, রাসেল কান্তি দাশ, অনুপ রায়, সঞ্জয় সরকার অক্ষয়, অনিক বনিক, মো. শিহাব উদ্দিন, সরফুদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী, মো. রাশেদ হোসেন, মো. ফজলে রাব্বী, মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস, মামুর আহসান, আকাশ শীল জয়, উদয় দেবনাথ ও জহির রায়হান অভি।
মিঠুন চৌধুরী সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সিআরবি নিয়ে রচিত প্রতিবাদী সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শঙ্কর দে, আলাউদ্দিন তাহের, সুজিত চক্রবর্তী ও জগন্নাথ দাশ। তবলায় ছিলেন শিল্পী সুরজিৎ সেন।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পী কঙ্কন দাশ, প্রণব চৌধুরী, সেলিম রেজা সাগর, তাসকিয়াতুন নূর তানিয়া ও সঞ্জয় পাল।
কথামালায় ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, সিআরবি রক্ষার দাবিতে চট্টগ্রামের সব মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। আজ প্রতিবাদের কেন্দ্রভূমি এই সিআরবি। নানা সংগঠন প্রতিবাদ করছে। সিআরবি আইনে ঘোষিত হেরিটেজ। কোনোভাবেই এর রূপ পরিবর্তন করা যাবে না। বেসরকারি হাসপাতাল করার জন্য যে টেন্ডার হয়েছিল সেখানে সিআরবি উল্লেখ ছিল না। অথচ টেন্ডারে সিআরবিকে প্রকল্প স্থান হিসেবে সিআরবি ঢুকিয়ে দিয়েছে। এটা কত বড় জালিয়াতি। এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করি তিনি হাসপাতাল প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে চট্টগ্রামবাসীর কাছে স্বস্তির বার্তা পৌঁছে দেবেন।
ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, যতদিন সরকারি ঘোষণা আসবে না, ততদিন প্রকল্প বাতিলের আন্দোলন চলবে।
ড. মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি আমাদের অহঙ্কার ও অলংকার। পণ্যময় হয়ে তা বিকিয়ে দেওয়া যাবে না। বেঁচে থাকার উপাদান নিয়ে ব্যবসা করা যায় না। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে চলি। চেতনা বিপন্ন হলে জাগ্রত জনতা চুপ করে বসে থাকবে না।
সভাপতির বক্তব্যে শরীফ চৌহান বলেন, সিআরবি রক্ষায় ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ এ আয়োজন। এর আগে শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় আমরা শতবর্ষী বৃক্ষে স্মারক নামফলক স্থাপন করেছি। আজ ছবি আঁকা, গান, আবৃত্তি ও কথামালায় সব শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণে এ আয়োজন। ভবিষ্যতেও যতদিন হাসপাতাল প্রকল্প বাতিল করা হবে না, ততদিন আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. হোসাইন কবীর, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সুজিত রায়, শিক্ষক শামসুদ্দিন শিশির, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ঋত্তিক নয়ন, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ভমেন্ট অ্যান্ড স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক মো. ওয়াহিদুর রহমান, পিপল’স ভয়েসের সদস্য শ্যামল মজুমদার, নির্মাণ আবৃত্তি অঙ্গনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাহফুজ, খেলাঘর মহানগরী সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোরশেদুল আলম চৌধুরী, সাংবাদিক প্রণব বল, মিন্টু চৌধুরী, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক শ্যামল ধর, সংগঠক বন বিহারী চক্রবর্তী, রাহুল দত্ত, আমিনুল ইসলাম মুন্না, আবৃত্তি শিল্পী দিলরুবা খানম, প্রকৌশলী তিতুমীর বান্না, সাংস্কৃতিক সংগঠক রুবেল দাশ প্রিন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আরাফাতুর রহমান, সাবেক ছাত্রনেতা শিবু প্রসাদ, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম, মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের নেতা আনোয়ার পলাশ।