যেখানেই মুক্তির সংগ্রাম, সেখানেই নজরুল : আসাদুজ্জামান নূর
সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, যেখানেই মুক্তির সংগ্রাম, সেখানেই নজরুল। মুক্তিযুদ্ধের শুরু আছে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শেষ নেই। কারণ মুক্তির লড়াই, মানুষের মুক্তির যে অগ্রযাত্রা, এটি অব্যাহত ধারা। এতে নতুন নতুন অধ্যায় সূচিত হয়।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় স্মৃতিবিজড়িত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পত্নী প্রমীলার জন্মস্থান মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদারবাড়ি প্রাঙ্গণে তিনদিনব্যাপী জাতীয় নজরুল সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ নতুন করে লড়াই করে, সেই লড়াইয়ে নজরুল আমাদের সঙ্গে আছেন। এ কথা মনে করেই আমরা নজরুল চর্চা করছি। মানুষের নতুন করে বাঁচার জন্য নজরুলচর্চার কোনো বিকল্প নেই।’
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘নজরুল আমাদের জীবনে এখন আরো বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ কারণেই আমরা লক্ষ করছি, একদিন আমরা জয় বাংলা বলে অসাম্প্রদায়িক স্লোগানটি ধারণ করেছিলাম। জয় বঙ্গবন্ধু বলে যে নেতাকে সামনে রেখে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, সেই চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করতেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি চুপ করে বসে নেই। সেই চেতনাগুলোকে ধ্বংস করতেই তারা নানাভাবে চেষ্টা করছে।’ ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করতে, সাম্প্রদায়িকতার নামে জনজীবনকে বিধ্বস্ত করতে চাইছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা দেখছি, মুক্তচিন্তার লেখকদের ওপর হামলা করা হয়েছে, অভিজিৎকে হত্যা করা হয়েছে, ধর্মযাজকদের ওপর হামলা করা হয়েছে। মসজিদের ভেতর ঢুকে ইমামকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিদেশিদের কাছে ধূলিসাৎ করার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এটা মেনে নেয়নি, বাংলাদেশের মানুষ এটার প্রতিবাদ করেছে, নিজের মতো করে।’
মন্ত্রী আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের বইমেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই বইমেলা অত্যন্ত সফলভাবে অনুষ্ঠিত হবে। লেখকরা লেখা বন্ধ করবেন না, প্রকাশকরা প্রকাশনা বন্ধ করবেন না।’ পাঠকরাও বইমেলায় যাওয়া বন্ধ করবেন না বলে অনুরোধ করেন মন্ত্রী।
স্থানীয়দের তেওতায় নজরুল-প্রমীলা বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্রন্থাগার স্থাপনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমার মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তারপরও আমি গুরুত্বসহ প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবহিত করব। আর গ্রন্থাগারটি নিজেরাই নিজেদের মতো করে গড়ে তুলবেন।
নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দুর্জয়, কবির নাতনি খিলখিল কাজী, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহিতুল আলম, মানিকগঞ্জের জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দিন, জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস, পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ইকরাম আহমেদ। এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মন্ত্রী ও অতিথিসহ নানা শ্রেণি মানুষের অংশগ্রহণে প্রমীলার জন্মভিটা থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে সভাস্থলে আসে। এরপর মন্ত্রী জমিদারবাড়ি ঘুরে দেখে নজরুল-প্রমীলা পাঠাগার উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা সভা শেষে সেখানে দলীয়, একক আবৃত্তি, নৃত্য ও মনোজ্ঞ সংগীত পরিবেশন করা হয়।