করোনা নমুনার ভুয়া পরীক্ষার পরিকল্পনা, গ্রেপ্তার তিন
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের স্বাক্ষর জাল করে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করিয়ে ভুয়া সনদপত্র দেওয়া এবং এজন্য সারা দেশে লোকবল নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এর মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও ঝালকাঠি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন টিকেএস গ্রুপের সিস্টারস কনসার্ন টিকেএস হেলথকেয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল্লাহ আলামিন, চেয়ারম্যান আবুল হাসান তুষার ও মার্কেটিং ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহীন মিয়া।
হারুন অর রশিদ বলেন, টিকেএস গ্রুপের নামের একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান বানিয়ে সারা দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষা করাবে মর্মে গত জুলাই মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন করে। কিন্তু আবেদনটির অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়। পরে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবের স্বাক্ষর জাল করে সারা দেশের লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে। তারা দেশের আটটি বিভাগের ৬৪ জেলার ৪৯২টি উপজেলার চার হাজার ৫৬২টি ইউনিয়নে লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে। তাদের ইচ্ছে ছিল এসব নিয়োগের মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নিবে। কিন্তু এ তথ্য পেয়ে যায় ডিবির গুলশান বিভাগ। এই অভিযোগে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার আরও বলেন, ‘টিকেএস নামের প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর ফার্মগেটে একটি অফিস নিয়েছে। সেখানে একটি চেয়ার ছাড়া আর কিছুই দেখা মেলেনি। এ চক্রের পরিকল্পনা ছিল, এসব কাজে নিয়োগের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর সারা দেশে আগে গ্রেপ্তারকৃত ডা. সাবরিনা ও সাহেদের মতো করে ভুল রিপোর্ট দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও মানুষকে বিপদে ফেলার। কিন্তু আমরা তা হতে দেইনি।’
হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ভুয়া অনুমতিপত্রের মাধ্যমে চক্রটি এরই মধ্যে ঝালকাঠি জেলার উপজেলা কো-অর্ডিনেটর ও ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার পদে বিভিন্ন জনকে নিয়োগ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিকভাবে এসব তথ্য আমাদের কাছে স্বীকার করে নিয়েছেন।’
‘আব্দুল্লাহ আল আমিন ও আবুল হাসান তুষার প্রাথমিকভাবে কোম্পানির প্রোফাইল বানানোর জন্য এক হাজার টাকা, বিভিন্ন লোগো সংবলিত আবেদনপত্র প্রিন্ট করার জন্য আরেক হাজার টাকা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়ার জন্য ৫০০ টাকা খরচ করে সারা দেশে ১০০টি ক্যাম্পাস স্থাপন করে। প্রতিটি ক্যাম্পাসের ডিলারশিপ দেওয়ার জন্য তারা দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। একই সঙ্গে বেশ কয়েক লাখ যুবকের কাছ থেকে ১০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের নামে আরও কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে’, যোগ করেন হারুন অর রশিদ।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার বলেন, করোনাকে পুঁজি করে কিছু চক্র সক্রিয়। আমরা বলতে চাই, জনসাধারণ যেন সরকার নির্দেশিত পথ ফলো করেন এবং প্রতারণা থেকে বেঁচে যান। আর কোথাও এমন ধরনের জালিয়াত চক্র দেখলে পুলিশকে জানান। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।