পরী মণি-মৌ-পিয়াসার মামলার তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্যতামূলক অবসর
চিত্রনায়িকা পরী মণি, মডেল মৌ ও পিয়াসার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর তত্ত্বাবধায়ক পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শেখ ওমর ফারুককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে অবসরের তথ্য জানানো হয়েছে।
একই প্রজ্ঞাপনে খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে ষষ্ঠ এপিবিএনের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. আবদুর রহিমকেও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কথা জানানো হয়েছে। দুজনকে ‘জনস্বার্থে’ সরকারি চাকরি থেকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের চাকরি ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নম্বর আইন) এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে তাদের সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। কর্মকর্তারা বিধি মোতাবেক অবসরজনিত সব সুবিধা পাবেন। জারির তারিখ থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে।
শেখ ওমর ফারুক সিআইডির ঢাকা মেট্রো উত্তরের দায়িত্বে ছিলেন।
গত ৪ আগস্ট রাতে রাজধানী বনানীর বাসা থেকে পরী মণি ও তাঁর সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আটক করে র্যাব। এ সময় পরী মণির বাসা থেকে বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়। পরদিন ৫ আগস্ট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরী মণি ও দীপুর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে র্যাব। ওই দিন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ দুই আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সেই রিমান্ড শেষে গত ১০ আগস্ট বনানী থানার মামলায় পরী মণিকে পুনরায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস। পরে গত ১৯ আগস্ট এ মামলায় তৃতীয় দফায় পরী মণিকে আরও একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম। শেষ দফা রিমান্ড মঞ্জুর করা দুই বিচারক দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলামকে আজ ব্যাখ্যা প্রদান করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
গত ২১ আগস্ট শনিবার পরী মণিকে তৃতীয় দফা রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটট আশেক ইমাম। গতকাল বুধবার পরী মণি গাজীপুরের কাশিমপুরের মহিলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।
কী তথ্যের ভিত্তিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা চিত্রনায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরী মণির রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এর ব্যাখ্যা দাখিল করতে সংশ্লিষ্ট দুই ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করা হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর মামলার নথিসহ (সিডি) তদন্ত কর্মকর্তাকে সশরীরে হাইকোর্টে হাজির থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
এ ছাড়া আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেছেন আদালত। পরী মণিকে রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা প্রশ্নে হস্তক্ষেপ চেয়ে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) করা এক আবেদনে আবেদনকারীপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শোনার পর এ আদেশ দেন হাইকোর্ট। আসকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, মো. মুজিবুর রহমান ও ড. সৈয়দা নাসরিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান।
পরী মণিকে তিন দফায় সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা চেয়ে গত ২৯ আগস্ট আবেদন করে আসক। আবেদনে এই রিমান্ড মঞ্জুর করা ও রিমান্ডের আবেদন করার কারণে সংশ্লিষ্ট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ ও র্যাবের প্রতি কারণ দর্শাতে রুল জারির আরজি জানায়।
এর আগে গত ২৬ আগস্ট একই হাইকোর্ট বেঞ্চ পরী মণির জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে আদেশ দেন। ১ সেপ্টেম্বর রুলের ওপর শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এই রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ৩১ আগস্ট পরী মণির জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এরপর ১ সেপ্টেম্বর কারাগার থেকে মুক্তি পান পরী মণি।