নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের এক বছর আজ
নারায়ণগঞ্জ শহরের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনার এক বছর আজ। গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে শিশুসহ ৩৪ মুসল্লির মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। ওই ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচনা শুরু হয়। সেই বিস্ফোরণের ঘটনায় সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরসহ অনেকেরই টনক নড়ে।
এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ বিভাগ ও জেলা প্রশাসন পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে তিতাস সংযোগ লাইনের লিকেজে মসজিদের ভেতর গ্যাস জমা এবং হঠাৎ বিদ্যুৎ স্পার্কিংয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটার বিষয়টি সামনে চলে আসে। পাশাপাশি মসজিদ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কথাও বলা হয়। সেই ঘটনায় মামলা হলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে তদন্ত ভার দেওয়া হয়। সিআইডি তদন্ত শেষে ডিপিডিসি, তিতাস ও মসজিদ কমিটির আটজনকে আসামি করে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে সব আসামি জামিনে রয়েছেন।
বিস্ফোরণের পরে তল্লার বাইতুস সালাত মসজিদটি প্রায় এক বছর বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি শর্ত সাপেক্ষে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দরজার সংখ্যা বৃদ্ধি করে ছয়টি করতে হবে। কিন্তু মসজিদে এখনো নামাজ পড়ার পরিবেশ তৈরি হয়নি। এ ছাড়া, মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটনার এক বছর পার হলেও এলাকাবাসী এখনো শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
যা ঘটেছিল সেদিন: গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর এশার নামাজ শেষে রাত পৌনে ৯টার দিকে পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। মসজিদের ভেতরে ৫০ জনের মতো মুসল্লি ছিলেন। বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে শিশুসহ ২৯ মুসল্লির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে নেওয়ার পর একে একে আরো ছয়জন মৃত্যুর মিছিলে যোগ দেয়। আর সেই স্বজনহারা পরিবারের সদস্যরা সরকারি ও বেসরকারিভাবে আর্থিক কিছু ক্ষতিপূরণ পেলেও এখনো বুকভরা যন্ত্রণা নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
মামলায় মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর আসামি হলেও তাঁর দাবি মূলত বিদ্যুৎ এবং তিতাস বিভাগের গাফিলতির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির বিষয়টি এড়িয়ে তিতাস ও বিদ্যুৎ বিভাগের বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ইতিবাচক রিপোর্ট পাওয়ার পর ছয়টি শর্তে মসজিদটি খুলে দিয়েছি নামাজের জন্য। মসজিদ কমিটি আমাদের আশ্বস্ত করেছে সরকারের বিধি-নিষেধ, শর্তাবলি সূচারুভাবে পালন করবে। আমরা চাই প্রত্যেক মুসল্লি স্বাস্থ্যবিধি ও নিয়ম মেনে মসজিদে নামাজ আদায় করবেন।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, নিহত ৩৪ জনের পরিবারের পক্ষ থেকে যদি সাহায্য চাওয়া হয় বিশেষত বিধবা যারা আছে, তারা যদি কোনো আবেদন করে আমরা তাদের বিধবা ভাতা দেওয়াসহ তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।
এলাবাবাসী মনে করে, মসজিদটি নামাজ পড়ার উপযুক্ত করে তুলতে মেরামতে যে অর্থ দরকার তা কোনো দাতা বা সরকারের সহযোগিতা ছাড়া হবে না।