ডিআইজি প্রিজন্সকে গোপনে জামিন : ‘বিচারকের কর্মকাণ্ড লজ্জাজনক’
বরখাস্ত হওয়া উপ-কারামহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিকের জামিন বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। ডিআইজি প্রিজন্সকে অস্বাভাবিকভাবে যে বিচারক জামিন দিয়েছেন তাঁর প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছেন, জেলা জজ পর্যায়ের একজন বিচারকের এ ধরনের আচরণ ও কাজ অপ্রত্যাশিত, লজ্জাজনক। তাকে জামিন দেওয়া আদালত অবমাননার সামিল।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।
৮০ লাখ টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি-প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিককে নিম্ন আদালতের দেওয়া জামিন গত ২ সেপ্টেম্বর বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তার মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আজ এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্ট মন্তব্য করেন, ‘আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে, জেলা জজ পর্যায়ের একজন বিচারকের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ ও কর্ম প্রত্যাশিত নয়। তাঁর এ ধরনের আদেশ উচ্চ আদালতের প্রতি অবজ্ঞা এবং যা আদালত অবমাননার সামিল। হাইকোর্ট বিভাগ এর আগে আসামির জামিন নাকচ করে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিজ্ঞ বিচারক আসামিকে জামিন প্রদান করে হাইকোর্টের আদেশকে অবজ্ঞা করেছেন।’
রায়ে আদালত আরও বলেন, জামিন দরখাস্তটি শোনার পর বিজ্ঞ বিচারক তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ্য আদালতে কোনো আদেশ প্রদান করেননি, যা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ আইনজীবীগণ কর্তৃক স্বীকৃত; এবং আদেশটি অতিগোপনে কারা কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়, যা সংশ্লিষ্ট পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীরাও জ্ঞাত ছিলেন না। এ ধরনের ঘটনা হতাশা ও লজ্জাজনক এবং আইনের সঙ্গে সংগতিহীন। সংশ্লিষ্ট আইনসমূহে অর্থাৎ ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৩৬৬ এবং ক্রিমিনাল রুলস অ্যান্ড অর্ডাস ২০০৯ রুল ১৭৯ (২) এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ‘রায়’ প্রকাশ্য আদালতে সংশ্লিষ্ট পক্ষদের উপস্থিতিতে প্রদান করতে হবে। বিতর্কিত আদেশ প্রদানের প্রক্রিয়া নানান প্রশ্নের সুযোগ করে দিয়ে বিচার বিভাগকেও বিতর্কিত করেছে।
হাইকোর্ট বলেন, এমতাবস্থায়, বিজ্ঞ বিশেষ জজ-৫ কর্তৃক আসামিকে প্রদত্ত জামিন আদেশটি বাতিল করা হল। আসামিকে সংশ্লিষ্ট আদালতে ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখের পূর্বে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হল।
‘এ ছাড়া ন্যায়বিচারের স্বার্থে বর্তমান মামলাটি বিশেষ আদালত-৫, ঢাকা হতে বিশেষ আদালত-৪, ঢাকা-এ বদলি করা হল। অবিলম্বে মামলার নথি বিশেষ আদালত-৪-এ প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হল’, যোগ করেন আদালত। হাইকোর্ট আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মামলার কার্যক্রম শেষ করে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ১৯ আগস্ট বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়ার ঘটনায় হাইকোর্টে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন।
হাইকোর্টে দাখিল করা ব্যাখ্যায় বিচারক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না করে বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেওয়ায় ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। সেই সঙ্গে অব্যাহতি দিতেও আবেদন করেন ওই বিচারক। হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে লিখিত ব্যাখ্যা দেন বিচারক ইকবাল হোসেন।
পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন। এ ছাড়া তার জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক।
২০১৯ সালের ২৭ জুলাই ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিক চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখন তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৮০ লাখ টাকা অর্জন করেন। সেই টাকা নিজ বাসার ক্যাবিনেটে লুকিয়ে রাখেন। অভিযান পরিচালনা করে তার বাসা থেকে ওই টাকা জব্দ করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি পার্থ গোপাল বণিক ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই দুদকে হাজির হয়ে অনুসন্ধান টিমের কাছে বক্তব্য দেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পার্থ গোপাল বণিক জানান, তার বাসায় ৩০ লাখ টাকা নগদ আছে। এ টাকার বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। পরে অভিযান চালিয়ে তার বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এ মামলায় হাইকোর্টে একাধিকার জামিন আবেদন করেও তিনি জামিন পাননি।