মোংলায় অর্ধেক দামে পণ্যের প্রলোভন, অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
মোংলায় ওয়ালটনের ভুয়া সাব ডিলার সেজে অর্ধেক দামে নতুন পণ্য দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হীরা বেগম ও মিজান শেখ দম্পতির বিরুদ্ধে।
টাকা ফেরত পেতে হীরা বেগম ও মিজান শেখের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে মিঠাখালী গ্রামে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা তাদের দেওয়া টাকা ফেরত কিংবা টাকার বিনিময়ে মালামাল চাইতে গেলে উল্টো তাদের মারধরসহ হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে হীরা বেগমসহ তার স্বামী মিজান শেখ।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে পৃথক অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। তবে ইউএনও সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
এছাড়া ওসি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগে সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হীরা বেগম (২৮) ও তার স্বামী মিজান শেখ (৩৫) নিজেদের ওয়ালটনের সাব ডিলার দাবি করে আসছেন। ভুয়া সাব ডিলার সেজে তারা দুজন মিলে মিঠাখালী ইউনিয়নের চৌরিডাঙ্গা, ঠোটারডাঙ্গা, আন্ধারিয়া ও সোনাখালী গ্রামের প্রায় ২০০ মানুষের কাছ থেকে ওয়ালটনের বিভিন্ন নতুন পণ্য অর্ধেক দামে দেওয়ার কথা বলে নগদ টাকা নেন। এরপর তাদের কোনো মালামাল না দিয়ে আজ নয়, কাল দিব বলে মাসের পর মাস ঘুরিয়ে আসছেন। এভাবে ঘুরানোর পর গত সোমবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান টুলু (৪২) হীরা বেগমের কাছে দেওয়া টাকা ফেরত কিংবা বিনিময়ে মালামাল চান। টাকা চাইতে গেলে টাকা ও মালামাল কোনোটাই না দেওয়ায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হীরা ও তার স্বামী মিজান মিলে টুলুকে বেদম মারপিট করেন।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার টুলু হীরা বেগম ও মিজানের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তবে তা কোনো কাজে আসেনি। টুলু বলেন, ‘এক মাস আগে হীরা আমাকে পাঁচটি চেয়ার ও একটি পানির ট্রাংক দেওয়ার কথা বলে আট হাজার টাকা নেন। এরপর থেকে গেলেই বলে আজ নয় কাল, এভাবে ঘুরিয়ে আসছেন। গত সোমবার সেই টাকা ফেরত চাইতে গেলে আমাকে তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে মারধর করে। এতে আমার একটি চোখে সমস্যাও হয়েছে। থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। ঘটনার পর দুদিন হয়ে গেলেও অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
এ ছাড়া আজ বিকেলে ৬৪ জন ভুক্তভোগীর স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে ইউএনও কমলেশ মজুমদারের কাছে। তিনি অভিযোগের বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে আগামী সাতদিনের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।
মিঠাখালীর ভুক্তভোগী আকবর গোলদার বলেন, ‘‘ফ্রিজ, ওয়াড্রপ, রাইসকুকার, গ্যাসের চুলা ও ফ্যান দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে হীরা ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এখন টাকাও দিচ্ছে না, পণ্যও দিচ্ছে না। চাইতে গেলে অকথ্য ভাষায় গালগাল করে বলেন, ‘টাকা দিছ তার প্রমাণ নিয়ে আসো।’’
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘হীরা ওয়ালটনের সাব ডিলার লাইসেন্স পেয়েছেন, তাই অর্ধেক দামে বিভিন্ন পণ্য দেবেন বলে আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন। অর্ধেক দামে আমাকে পণ্য দেওয়ার পর মালামাল বুঝে পেয়েছি বলে আমার স্ত্রীর স্বাক্ষর নেয়। পরে সেই স্বাক্ষর জালজালিয়াতি করে ওয়ালটনের শোরুম থেকে আমার অর্ধেক দামে নেওয়া মালের বিপরীতে পুরা দামের কিস্তির ভাউচার পাঠায়। অর্ধেক দামে দিয়ে পরে বিভিন্ন জনের নামে পুরো দামের ভাউচার ও কিস্তির বই পাঠিয়ে আমাদের অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন হীরা। আর অনেকের টাকা নিয়ে কোনো পণ্য না দেওয়ায় প্রায়ই এ নিয়ে ঝামেলা হয়ে আসছে।’
ভুক্তভোগী কুলসুম বলেন, ‘হীরা তিন হাজার ৭০০ টাকায় আমাকে দুটি মিটসেফ ও একটি রাইস কুকার দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন। দেড় মাস হয়ে গেছে, তারপরও টাকা ও পণ্য কোনোটাই দিচ্ছে না, শুধু ঘুরাচ্ছে।’
নুরানী নামের একজনের কাছ থেকে নতুন একটি ফ্রিজ অর্ধেক দামে দিবেন বলে তিন মাস আগে তার কাছ থেকে আট হাজার টাকা নিয়েছেন হীরা। এখন টাকা ও ফ্রিজ কিছুই দিচ্ছেন না।
হীরার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ কয়েক গ্রামের অসংখ্য নারী-পুরুষের। তারা তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রশাসনের দারস্থ হয়েছেন। বিচার চাইছেন এই প্রতারক দম্পতির।
এসব অভিযোগের বিষয়ে হীরা বেগম বলেন, ‘আমি ওয়ালটনের সাব ডিলার না, তবে ডিলার ফারুক ভাইয়ের কাছ থেকে মালামাল এনে বিক্রি করি। তবে এখন একটু সমস্যা হচ্ছে, সব সময় তো সবার চাহিদানুযায়ী মালামাল শোরুমে থাকে না। যাদের টাকা নিয়েছি তাদের অনেককেই মালামাল দিয়েছি, আর যাদের টাকা নেওয়া আছে তাদেরও মালামাল দিব, তবে একটু সময় লাগবে।’