ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহায়তা : বাংলাদেশ-জাতিসংঘ চুক্তি সই
নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়ে জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের। আজ শনিবার এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানগুলোর নোয়াখালীর ভাসানচরে সম্পৃক্তকরণ বিষয়ে আজ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর)-এর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন এবং জাতিসংঘের পক্ষে ইউএনএইচসিআর-এর বাংলাদেশে প্রতিনিধি জোহানেস ফন ডার ক্লাউ সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান প্রধান অতিথি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম এমপি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কক্সবাজারের মতো ভাসানচরেও মানবিক সহায়তা পরিচালিত হবে। বেসামরিক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এখানে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর-এর যৌথ উদ্যোগে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমানের নাগরিকদের (এফডিএমএন বা রোহিঙ্গা) খাদ্য ও পুষ্টি, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, চিকিৎসা, মিয়ানমার কারিকুলাম ও ভাষায় তাঁদের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং জীবিকায়নের ব্যবস্থা করা হবে। বাংলাদেশ সরকার এখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা এবং কর্মরত জাতিসংঘ ও এর সহযোগী সংস্থা ও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয় দেখাশোনা করবে।
এ ছাড়া ভাসানচরে এফডিএমএন-দের বসবাসের কারণে পার্শ্ববর্তী স্থানীয় এলাকা ও জনগণের ওপর যদি প্রভাব পড়ে, তা নিরসনে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, “গত ১৯৯১-৯২ সাল থেকে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এবং এর পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ১১ লাখ ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের’ মানবিক সহায়তার কার্যক্রম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্পাদন করা হচ্ছে। জনসংখ্যার অতি ঘনবসতি এবং পরিবেশের ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এক লাখ ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিককে’ নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরে বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে, ভাসানচর কিংবা কক্সবাজারে বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের থাকার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা সাময়িক। আমাদের মূল লক্ষ্য—মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসন। সুতরাং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোসহ অন্যান্য দেশের সার্বিক সহায়তায় প্রত্যাবাসনের কাজ দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ২০১৮ সালে গঠিত টেকনিক্যাল অ্যান্ড প্রোটেকশন সাবকমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের আওতায় এক লাখ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের বসবাসের জন্য ভাসানচরে এক হাজার ৪৪০টি আশ্রয়গৃহ এবং ১২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।’
“২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল পর্যন্ত চার হাজার ৭২৪ পরিবারের ১৮ হাজার ৮৪৬ জন ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিককে’ ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে আরও প্রায় ৮০ হাজার ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিককে’ ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। স্থানীয় এবং কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও’র সহযোগিতায় ভাসানচরে স্থানান্তরিত ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের’ খাবারসহ অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী প্রদানের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চলমান।”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, ‘এ সমঝোতা স্মারক বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভাসানচরে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা সহজতর হবে।’
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বলেন, “বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে উদারভাবে আশ্রয় দেওয়ায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল হয়েছে। বিশ্বনেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশন এবং অপর একটি ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাবাসন বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষপ গ্রহণের জন্য বিশ্বনেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কক্সবাজার ও ভাসানচরে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের মানবিক সহায়তার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। প্রত্যাবাসনই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান। তিনি জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আহ্বান জানান।’
ইউএনএইচসিআর-এর বাংলাদেশে প্রতিনিধি সভায় জানান, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা সেবা প্রদান নিশ্চিত করা সহজ হয়েছে। এজন্য তিনি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ সময় পররাষ্ট্র, জননিরাপত্তা বিভাগ, এনএসআই এবয জাতিসংঘের বাংলাদেশে আবাসিক সমন্বয়কারী (অন্তর্বর্তীকালীন), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি ডিরেক্টরসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।