‘সাম্প্রদায়িকতা স্পর্শ করেনি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদকে’
বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান গবেষক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আজ সকালে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি, পত্রিকা ও মিলনায়তন বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) নূরুন্নাহার খানম। জাতিস্মর মনীষী আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ শীর্ষক বক্তৃতা দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক শিরীণ আখতার। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
স্বাগত বক্তব্যে নূরুন্নাহার খানম বলেন, বাংলা একাডেমি জন্মলগ্ন থেকে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদকে স্মরণ করে আসছে বহুমাত্রিক আয়োজনে। এবার সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতেও আমরা তাঁর নবমূল্যায়নে ব্রতী হয়েছি।
অধ্যাপক শিরীণ আখতার বলেন, পুথি-সাহিত্যের গবেষণায় সারা জীবন কাটালেও আধুনিক সাহিত্য ও ভাবধারার সঙ্গে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের নিবিড় পরিচয় ছিল। সবরকম গোঁড়ামি, কুসংস্কার, সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে তিনি ছিলেন। সাম্প্রদায়িকতা তাঁকে স্পর্শ করেনি। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে তিনি সকলের আপনজন ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে আবদুল করিমকে জানতে হলে এবং তাঁর মন-মানস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে হলে তাঁর সংগ্রহ কর্মকাণ্ড, সমগ্র রচনাবলি এবং তাঁর চিন্তা-চেতনার সঙ্গে পরিচিত হওয়া প্রয়োজন।
শিরীণ আখতার বলেন, কাজী নজরুলের পূর্বে একজন শীর্ষ মুসলমান বাঙালি মুন্সি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ তাঁর ধর্মীয় অনগ্রসরতা কাটিয়ে প্রবল সাম্প্রদায়িকতার ভেতরে হেঁটে হেঁটে কীভাবে তাঁর দেশ-কাল-সমাজকে ডিঙিয়ে অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছেন, তা একটি বিস্ময়কর ব্যাপার! যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আমরা চেয়েছি, তিনি সেই বাংলাদেশের কথা, বাংলা ভাষার কথা বহু আগেই বলেছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আবুল মনসুর বলেন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের মতো মনীষীদের আনুষ্ঠানিকতার বৃত্ত ভেদ করে সব সময়ই স্মরণে রাখতে হবে। কারণ, এমন মানুষদের কাছেই আছে আমাদের এগিয়ে যাবার প্রয়োজনীয় রসদ। সাহিত্যবিশারদ সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে পুথি উদ্ধার এবং গবেষণার কাজ চালিয়ে গেছেন। তাঁর কাছ থেকে আমাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে সাধনা ও একাগ্রতার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
সভাপতির কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের জাতিযাত্রা এবং মানবযাত্রা তাঁর জন্মের সার্ধশত বর্ষ পেরিয়ে আজও বিশেষ তাৎপর্যে উদ্ভাসিত। সমকালীন সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত বর্তমানকে গোটা জাতির সেবায় উৎসর্গ করেছেন এবং ভবিষ্যতমানতার সঙ্গে আমাদের যুক্ত করেছেন।
মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, স্বশিক্ষিত এবং সুশিক্ষিত সাহিত্যবিশারদের জীবন থেকে আমাদের স্বশৃঙ্খলা ও স্ব-ব্যবস্থাপনার শিক্ষা নেওয়ার আছে। তাঁর মাতৃভাষা প্রেম, স্বদেশপ্রীতি এবং অসাম্প্রদায়িক জীবনদৃষ্টিই তো ভবিষ্যৎ আলোকিত বাংলাদেশের রূপকল্প।
মুহম্মদ নূরুল হুদা আরও বলেন, ১১ অক্টোবর বাংলার আরেক শ্রেষ্ঠ সন্তান সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী এবং বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহিমের জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। আমরা তাঁকেও স্মরণ করি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়। অচিরেই তাঁর স্মরণে বাংলা একাডেমি একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
অনুষ্ঠানে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের পরিবারের সদস্য অধ্যাপক নেহাল করিম, অ্যাডভোকেট যাহেদ করিম এবং গীতিকবি হাসান ফকরী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক সায়েরা হাবীব।