চিরঘুমে ড. ইনামুল হক
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরবিদায় নিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নাট্যজন অধ্যাপক ড. ইনামুল হক।
আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ড. ইনামুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সরকারের মন্ত্রীবর্গ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। বুয়েট ও বনানী কবরস্থান জামে মসজিদে দুই দফা জানাজা শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে যখন শহীদ মিনারে ড. ইনামুল হকের মরদেহ নেওয়া হয়, ছুটে যান প্রখ্যাত অভিনেতা আবুল হায়াত। ৫৫ বছরের বন্ধুকে শেষ বিদায় জানাতে হাতে নেন একগুচ্ছ রজনীগন্ধা। কোনও রকমে বন্ধুর মৃত দেহের কাছে ফুলগুলো সঁপে অঝোরে কাঁদেন আবুল হায়াত। মেয়ে নাতাশা হায়াত বাবার কাছে ছুটে গেলেও বন্ধুর জন্য কান্না থামেনি আবুল হায়াতের।
উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কেঁদে কেঁদে বিশিষ্ট অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াত জানিয়েছেন, ‘আমি আর নিতে পারছি না। এখন আর কিছুই বলার নেই আমার। বলার মতো অবস্থায়ও নেই।’
সকালে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ড. এনামুল হকের মরদেহ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি, তানজিকা আমিন, নাতাশা হায়াত, মোমেনা চৌধুরী, বৃন্দাবন দাস, মীর সাব্বির, নির্মাতা অরণ্য আনোয়ারসহ অনেকে।
গতকাল সোমবার বিকেল আনুমানিক সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডের বাসভবনে ড. ইনামুল হকের মৃত্যু হয়।
দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে নাটকের সাথে কাজ করেছেন ইনামুল হক। ১৯৬৮ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন তিনি। পরে ১৯৯৫ সালে নিজেই নাগরিক নাট্যাঙ্গন নামে দল প্রতিষ্ঠা করেন। সমানতালে নাটক রচনা করেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন এবং অভিনয় করেছেন। সব্যসাচী এই ব্যক্তিত্বের পুরো পরিবারই নাটকের সাথে জড়িত। স্ত্রী লাকী ইনাম, মেয়ে হৃদি হক, প্রৈতি হক আর দুই জামাতা লিটু আনাম ও সাজু খাদেম সবাই নাটক নিয়ে কাজ করেন। তাঁর এই প্রস্থান দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি বলে মনে করেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
পেশাগত জীবনে ড. ইনামুল হক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের অধ্যাপনা করেছেন দীর্ঘ ৪৩ বছর। বেলা সাড়ে ১২টায় তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বুয়েট খেলার মাঠে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ইনামুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
ড. ইনামুল হকের জন্ম ফেনীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করার প্রয়াসে বিভিন্ন আন্দোলনমুখী নাটকে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে আইয়ুব খানের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তৎকালীন অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন নাট্যচর্চাকে হাতিয়ার করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সৃজনীর ব্যানারে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পথনাটক করেন।
ড. ইনামুল হক ২০০২ সালে একুশে পদক এবং ২০১৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।