‘সাম্প্রদায়িকতার ঘুমন্ত দানবকে জাগিয়ে তুলে ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে সরকার’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার ঘুমন্ত দানবকে জাগিয়ে তুলে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে এ সরকার। কিন্তু এ দানব যে তাদেরই ঘাড় মটকে দেবে, এটা এখনও টের পাচ্ছে না।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মৎসজীবী দলের আয়োজনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেসব ঘটনা ঘটেছে সেসব ঘটনার সঙ্গে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল জড়িত—আওয়ামী লীগ এ কথা বলছে। আমার প্রশ্ন হলো, আপনারা কেন এ ধরনের কথা বলছেন? আপনারা যখনই এ ধরনের কথা বলেন, তখনই জনগণের মনে আরও সন্দেহ সৃষ্টি হয় যে, আপনারাই সুপরিকল্পিতভাবে পবিত্র কোরআন অবমাননা এবং হিন্দুদের ওপর আক্রমণের মতো জঘন্যতম ঘটনা ঘটিয়েছেন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য নষ্ট করেছেন। এই দেশে কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো বিভেদ ছিল না। জনগণের মধ্যে বিভিন্ন বিভেদ সৃষ্টি করেছে তারা। এই আওয়ামী লীগ হচ্ছে বিভেদ সৃষ্টি করার কারখানা। আগে তো কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা শুনিনি। আপনাদের আমলে তা শুনছি। কেন আপনাদের আমলে নিজেদেরকে সেক্যুলার দাবি করেন? আর, আপনাদের সময়ে এই সাম্প্রদায়িক ঘুমন্ত দানবকে জাগিয়ে তুলে দেশে রক্তপাত সৃষ্টি করেছেন।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজ গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকা যে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করছে, প্রত্যেকটাতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নাম আসছে। হাজীগঞ্জের হৃদয় ছাত্রলীগের ছেলে, সে তার লোকজন দিয়ে কুমিল্লায় একটা প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সেখানে ঝামেলা সৃষ্টি করেছে। পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী, তার লোকজনই এ ধরনের কর্মকাণ্ড করেছে। সেই মেহেদী বলেছে, সে নয়, খোকন নামের ছাত্রলীগের সভাপতি এই কাজ করেছে। অথচ বিএনপিনেতা বরকত উল্লাহ বুলুর নামে মামলা দিয়ে দিলেন তাঁরা। নোয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করলেন যুবদলের নেতাকর্মীদের। কিন্তু সব বেরিয়ে আসছে। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসছে।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘এরা (আওয়ামী লীগ) এমন একটি দল, জনগণের রক্ত শুষে নিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চায়। এটাই তাদের অভিপ্রায়। এটাই হচ্ছে তাদের রাজনীতির কর্মসূচি। এই কর্মসূচি নিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করে মানুষের ভোটের অধিকার হত্যা করে ডাকাতের মতো করে ক্ষমতায় বসে আছে ১৪ বছর ধরে। মিথ্যা দিয়ে টিকে থাকাই তাদের মূল লক্ষ্য। কুমিল্লার পূজামণ্ডপসহ দেশের অন্য অঞ্চলের যে ঘটনা আমরা বারবার বলে আসছি এসবে সরকার জড়িত। সেই জিনিসগুলো প্রতিদিন বেরিয়ে আসছে। তাদের সেন্সরশিপ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ফেসবুকে কিছু লিখলেই গ্রেপ্তার হয় এত কিছুর পরেও সত্য বেরিয়ে আসছে। বেরিয়ে আসছে এসব ঘটনার সঙ্গে তাদের ছাত্রলীগ-যুবলীগ জড়িত।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ‘এই অত্যাচার দুর্নীতি ঢেকে রাখার জন্যই দেশনেত্রী গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। তাদের এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাতে কেউ কথা বলতে না পারে তার জন্য খালেদা জিয়া বন্দি এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে লাখ লাখ মামলা।’
সংগঠনের সভাপতি মৎসজীবী দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাবের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, উলামা দলের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, স্বেচ্ছাসেবক দলের নাদিম চৌধুরী, সেলিম মিয়া, জাকির হোসেন খান, ওমর ফারুক পাটোয়ারি, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম রাশেদ, সাইদুল ইসলাম টুলু, জহিরুল ইসলাম বাশার, আমির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।