মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে ১৯ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী অংশ নেয় : এপিবিএনের অধিনায়ক
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ১৯ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী অংশ নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন ১৪ নম্বর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নাইমুল হক। এ হত্যাকাণ্ডের আসামি আজিজুল হককে আজ শনিবার গ্রেপ্তারের পর তাঁর দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এ খবর জানান এপিবিএনের এই অধিনায়ক।
এর আগে আজ শনিবার সকালে আজিজুল হকসহ এ হত্যাকাণ্ডের চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে এপিবিএন। উখিয়ার কুতুপালং লাম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের অধীন লোহার ব্রিজ এলাকা থেকে আজ ভোর ৪টার দিকে ওই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে জানায় এপিবিএন।
গ্রেপ্তার করা রোহিঙ্গা আসামিরা হলেন, মোহাম্মদ আজিজুল হক, মো. রশিদ ওরফে মুরশিদ আমিন, মো. আনাছ ও নূর মোহাম্মদ।
এর আগে মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এর মধ্যে ইলিয়াস নামের এক রোহিঙ্গা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আজ শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন ১৪ নম্বর এপিবিএনের অধিনায়ক মো. নাইমুল হক।
এ সময় নাইমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ধৃত আসামি আজিজুল হক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, মাস্টার মুহিবুল্লাহকে হত্যার দুদিন আগে রাত ১০টার দিকে লম্বাশিয়া মরকজ পাহাড়ে একটি মিটিং হয়। ওই মিটিংয়ে আজিজুল হকসহ আরও চার জন উপস্থিত ছিল। তথাকথিত দুর্বৃত্তদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মুহিবুল্লাহকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে মর্মে ওই মিটিংয়ে আলোচনা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয় যে, মাস্টার মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের বড় নেতা হয়ে উঠেছেন। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন সংক্রান্তে বিশেষ ভূমিকা পালন করায় দিনে দিনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে উঠেছেন। তাঁকে থামাতে হবে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।’
এপিবিএনের অধিনায়ক আরও জানান, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল হক জানিয়েছেন, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ১৯ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী অংশ নেয়। এ ছাড়া কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিল পাঁচ অস্ত্রধারী।’
এসপি নাইমুল হক জানান, ‘সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আজিজুল হককে আজ শনিবার ভোরে লম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের অধীন লোহার ব্রিজ এলাকা থেকে একটি ওয়ান শুটারগান এবং একটি তাজা কার্তুজসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আজিজুলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করতে আসামিদের মাত্র দুই মিনিট সময় লেগেছে জানিয়ে আজিজুলের বরাত দিয়ে এসপি নাইমুল হক আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন পরিকল্পনা অনুযায়ী এশার নামাজের পর মাস্টার মুহিবুল্লাহ তাঁর শেডে ফিরে গেলে ধৃত মুরশিদ আমিন তাঁকে নিজের শেডে ডেকে নিয়ে প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথা বলেন এবং কিছু লোক তাঁর সঙ্গে অফিসে কথা বলবেন বলে ডেকে নিয়ে যান।’
এসপি বলেন, ‘আজিজুল আরও জানান, মুহিবুল্লাহ’র অবস্থানের তথ্য অপর দুই আসামি মো. আনাছ ও নূর মোহাম্মদকে জানিয়ে ওই এলাকা দ্রুত ত্যাগ করেন মুরশিদ আমিন। পরে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা সাত সদস্যের মুখোশধারী দুর্বৃত্ত দলকে অফিসে আসতে বলেন আনাছ ও নূর মোহাম্মদ।’
নাইমুল হক বলেন, ‘আজিজুলের ভাষ্যমতে, ওই দিন দুর্বৃত্ত দলটির তিন জন অফিসে ঢোকে। এ ছাড়া আজিজুল, আনাছ, নূর মোহাম্মদ এবং অপর এক অস্ত্রধারীসহ চার জন অফিসের দরজায় অবস্থান নেন। অফিসে প্রবেশ করা এক অস্ত্রধারী ‘মুহিবুল্লাহ ওঠ’ বললে মুহিবুল্লাহ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান। এরপর প্রথম দুর্বৃত্ত একটি, দ্বিতীয় জন দুটি এবং সর্বশেষ দুর্বৃত্ত একটিসহ মোট চারটি গুলি করলে মুহিবুল্লাহ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। হত্যাকাণ্ডের পর অফিসের পেছনের দরজা দিয়ে আজিজ, আনাস, নূর মোহাম্মদসহ বাকিরা পালিয়ে যান বলে জানায় আজিজুল হক।’
বিফ্রিংয়ে নাইমুল হক বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পরই এপিবিএন পুলিশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। ফলে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এপিবিএনের এই কর্মকর্তা।