ফেসবুকে বাবার সন্ধানে মেয়ের পোস্ট, পেলেন বস্তাবন্দি লাশ
প্রাইভেটকার চালক বাবা নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় জিডি করার পাশাপাশি বাবার সন্ধান চেয়ে ছবিসহ নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন মেয়ে আয়শা আক্তার। তার বিশ্বাস ছিল ছবিসহ ফেসবুকে বাবা নিখোঁজের পোস্ট দিলে হয়তো কেউ তার বাবার সন্ধান দিতে পারবেন। কিন্তু জীবিত বাবার সন্ধান দিতে পারেনি কেউ, পেয়েছে বাবার বস্তাবন্দি লাশের সন্ধান।
গত শুক্রবার দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশখালী পটিয়া আনোয়ারা সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি একটি লাশ।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল উদ্দিন বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘লাশটি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দী এলাকায় চাঁদ মিয়ার ছেলে শাহা আলমের (৪৫) বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। শাহ আলম কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বালিয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা হলেও তিনি বর্তমানে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বেপারিপাড়া এলাকায় থাকতেন। কেনও একটি চক্র তাকে নির্মমভাবে হত্যার পর লাশ এখানে ফেলেছে বলে আমরা ধারণা করছি।’
সূত্রে প্রকাশ, প্রাইভেটকার চালক শাহ আলম ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে তার মেয়ে আয়শা আক্তার বাদী হয়ে গত ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সকালে জিডি করার পর বিকেলে পাওয়া যায় গলায় গামছা পেঁচানো বস্তাবন্দি লাশ।
মেয়ে আয়শা আক্তার বলেন, ‘আমার আব্বু একজন পেশায় প্রাইভেটকার চালক। উনি গত ২৬ অক্টোবর সকাল ৭টায় কোম্পানির ডিউটির জন্য মালিক বদরুজ্জামানকে নিয়ে পটিয়ায় যায়। আব্বু নির্দিষ্ট সময়ে বাড়িতে না এলে আমরা তার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন আমাদের বলেন যে, আব্বু তাকে নিয়ে সারা দিন পটিয়ায় ছিল। বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতের সামনে তাকে নামিয়ে দেন। ২৭ অক্টোবর বিকেল ৫টায় উনার ফোন থেকে কল আসে। কিন্তু কোন কথা বলে না। আম্মু হ্যালো বলার পরে ফোন পাঁচ মিনিটের মতো হোল্ড করে রেখেছিল ওইদিক থেকে। এরপরে আবার গতকাল ২৮ অক্টোবর আবার আব্বুর ফোনে কল দিলে একজন লোক রিসিভ করে জানান তিনি ফোনটি নাকি বাঁশখালি আনোয়ারা রোডে ভোরে হাঁটতে গিয়ে পথে কুড়িয়ে পেয়েছেন। কিন্তু উনি ফোনের মালিককে (আমার বাবাকে) দেখেননি। এরপর কল কেটে দিয়ে আর রিসিভ করেনি। লোকটি ফোন অফ করে দিয়েছেন।’
বাঁশখালী থানার ওসি কামাল উদ্দিন বলেন, ‘দুপুর দেড়টার দিকে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করি। প্রথমে লাশটির পরিচয় পাওয়া না গেলেও চট্টগ্রাম থেকে পরিবারের লোকজন এসে লাশটি শনাক্ত করেছে। গত ২৬ অক্টোবর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় পরিবারের লোকজন থানায় জিডি করেছিলেন।’
আজ শনিবার দুপুরে (আড়াইটার সময়) এ রিপোর্ট পর্যন্ত শাহ আলমের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছিল।
ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন নিহতের মেয়ে আয়শা আক্তার।