মিতু হত্যা : বাবুল আক্তারের মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহামুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মেহনাজ রহমান শুনানি শেষে পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন খারিজ ও বাবুল আকতারের দায়ের করা মামলা চলমান থাকবে বলে আদেশ দেন।
দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহামুদা খানম মিতু হত্যা মামলার পিবিআই তদন্তে বাবুল আক্তারকে মূল পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে গত ১২ মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে গত ১৪ অক্টোবর নারাজি দেন বাবুল আক্তার।
আদালতে শুনানি শেষে পিবিআই প্রতিবেদন খারিজ ও নারাজি প্রতিবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে গত ২৭ অক্টোবর পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর সর্বশেষ শুনানিতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করা হয় বলে জানান বাদীর আইনজীবী।
বাবুল আকতারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আদেশে উল্লেখ করেছেন, পিবিআই যে প্রতিবেদন বা চূড়ান্ত প্রতিবেদন যেটা দিয়েছেন সেটা গ্রহণ করেন নাই। খারিজ করেছেন। আমরা বলেছিলাম, মামলাটা পুনরায় তদন্ত করা হোক। এই রিপোর্ট বাতিল করা হোক এবং অন্য একটি সংস্থা দিয়ে মামলাটি তদন্ত করা হোক। আদালত বাবুল আক্তার যে মামলার বাদী সেটা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’
মামলার বাদীর আইনজীবী জানান, পুলিশ রির্পোট অনুয়ায়ী বাবুল আক্তার আসামি। আসামির আবার নারাজি কিসের। তবে আদালত প্রতিবেদন খারিজ করে পুনরায় তদন্তের বিধান নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেন।
মিতুর বাবার আইনজীবী আহসানুল হক হেনা ফোনে এনটিভিকে বলেন, ‘এই বাবুল আক্তারের মামলায় নারাজি দেওয়ার কোনো বিধান ছিল না। কারণ, পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি আসামি। বাবুল আক্তারের শ্বশুর যে মামলাটি করেছেন সেটাতেও তিনি আসামি। তো, আসামির আবার নারাজি কিসের? আসামি তো সবসময় নারাজ। অর্ডার হওয়া উচিত ছিল বাবুল আক্তারের নারাজি পিটিশন খারিজ। এটাই করা উচিত ছিল। কিন্তু দুটোই খারিজ করে দিয়ে পুনরায় তদন্ত করার বিধান কোথায় আছে আমি জানি না।’
‘বাবুল আক্তারের শ্বশুর যে মামলাটি করেছেন সেটা তো বহাল আছে। ফলে, এটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নাই। কারণ, দুটোই তো খারিজ করে দিয়েছেন। পুলিশ রিপোর্টও খারিজ, বাবুল আক্তারের নারাজিও খারিজ। এখানে আর কিচ্ছু নাই’ যোগ করেন অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা।
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন মেয়ে হত্যার অভিযোগে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। একটি মামলা চলাকালে শ্বশুরের আরেকটি মামলা দায়ের একটি খারাপ নজির বলে মনে করছেন মানবাধিকার আইনজীবীরা।
মানবাধিকার হিউম্যান রাইটসের সভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান এনটিভিকে বলেন, ‘আমরা দেখেছি এরই মধ্যে বাবুল আক্তারের শ্বশুর বাদী থানায় আরেকটি এফআইআর করেছেন। এই এফআইআরে বাবুল আক্তার ও অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা; এটি খারাপ নজির। মানবাধিকারকর্মীরা বলেছিলাম, দুটি মামলার প্রয়োজন ছিল না। যদি বাবুল আক্তারের অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে সেই মামলায় তার বিচার হওয়ার সুযোগ আছে। তাহলে কেন দুটি মামলা হলো। এটা অনিয়ম। মহামান্য উচ্চ আদালত, এ ধরনের অনিয়মের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং একই ঘটনায় দুটি মামলা না করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। দ্বিতীয় এজাহারটি বেআইনি। এটি স্থগিত হওয়া দরকার। যেহেতু মূল মামলাটি চলমান আছে এবং পুনরায় তদন্তে গিয়েছে তাই দ্বিতীয় মামলাটি চলমান থাকা সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থি।’
এ মামলায় বর্তমানে বাবুল আক্তার কারাগারে আছেন। ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড় এলাকার বাসার কাছে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছিলেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আকতারের স্ত্রী মিতু।