ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পোশাক শ্রমিকেরা
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো সারা দেশে চলছে পরিবহণ ধর্মঘট। এর ফলে ঢাকার সাভারে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকেরা। প্রায় ১০ লাখের বেশি শ্রমিক অধ্যুষিত শিল্পাঞ্চল সাভারের আশুলিয়ায় আজ সকাল থেকেই পরিবহণ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তাঁরা।
শ্রমিকদের মধ্যে যেভাবেই পেরেছেন, সময়মতো হাজিরা দিতে পরিমরি করে রিকশা-ভ্যানে উঠে কর্মস্থলের পথ ধরেছেন। অনেকে হেঁটেই কারখানায় গেছেন। এ ছাড়া ভোর থেকেই পরিবহণের অপেক্ষায় থাকা শ্রমিকদের জটলার সৃষ্টি হয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে।
সকালে সাভারের আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের ঢাকা-আরিচা, চন্দ্রা-নবীনগর ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন শ্রমিক থেকে শুরু করে অফিসগামীরা। রিকশা-ভ্যানগুলোতে বাড়তি ভাড়া দিয়ে পৌঁছাতে হচ্ছে গন্তব্যে।
মহাসড়ক ছিল ইজিবাইকের দখলে
রেডিও কলোনিতে পরিবহণের জন্যে অপেক্ষমান তৈরি পোশাক শ্রমিক বিউটি আক্তার বলেন, ‘বড়লোকেরা তো নিজেগো গাড়ি কইরাই অপিসে যাইতাছে। কিন্তু আমাগো কষ্ট বুঝে না কেউ। যদি দেরি হয়, তাইলে মালিক হাজিরা কাটবো। আবার দেহেন, ৫০ টাকার ভাড়া চাইতাছে দেড়শ টাকা। আমাগো বেতন তো আর বাড়বো না। অহন বাড়তি ভাড়া দিয়া টাকাগিলা ফুরাইতাছে। মাস শ্যাষে কি দিয়া সংসার চালামু, তা খোদাই জানে।’
একই কথা বলছিলেন ঝর্ণা আক্তার নামের আরেক শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘যত মুশকিল, সব খোদা আমাগো কপালে লেইখ্যা রাখছে। সামান্য যে কয়ডা টাকা বেতন পাই, তা দিয়াই টানাটানি। তার উপর বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম! এতকিছুর পর নিশ্চয়ই গাড়ি ভাড়াও বাড়াইবো। তাইলে আমরা চলুম কেমনে?’
ঢাকার মতিঝিলে একটি ব্যাংকে চাকরি করেন সাব্বির হোসেন। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই দেশে সবাই যে যার জায়গায় রাজা। আমরা সাধারণ প্রজা হিসেবেই কেবল কষ্ট করে গেলাম। তেলের দাম বাড়বে ভালো কথা। কিন্তু, সরকার কি পারতো না—একটু সমন্বয় করে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিতে? কিন্তু দেখেন, আজ দুদিন ভেঙে ভেঙে মতিঝিল যাচ্ছি। একে তো বাড়তি খরচ, তার উপর ভোগান্তি। এসব করে যে সাধারণ মানুষের কষ্ট দিন দিন বাড়ছে, তা যেন দেখার কেউ নেই।’
এদিকে পরিবহণ ধর্মঘটে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন ইজিবাইক চালকেরা। ৫০ টাকার ভাড়া তারা হাঁকছেন দেড়শ থেকে ২০০ টাকা।
ইজিবাইক চালক রফিকুল জানান, আগে তিনি পাড়া-মহল্লায় ইজিবাইক চালাতেন। গত দুদিন ধরে যাত্রীর পাশাপাশি আয়ও বেড়েছে তাঁর। যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ। সবাই বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন, তাই তিনিও নিচ্ছেন।’
চরম ভোগান্তিতে দীর্ঘক্ষণ ধরে পরিবহণের অপেক্ষায় ছিলেন মিটফোর্ড হাসপাতালের উদ্দেশে বের হওয়া সাংস্কৃতিক কর্মী আফজাল হোসেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই দেশে কত শত রাজনৈতিক দল আর তাদের নেতাকর্মী। আজ দেখেন সাধারণ মানুষ কত দুর্দশায় আছে। কিন্তু, সবাই যেন ঘুমিয়ে।