ইভ্যালির ওয়্যারহাউস পরিদর্শন পরিচালনা কমিটির
আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির হাইকোর্ট গঠিত নতুন পরিচালনা কমিটির পাঁচ সদস্য প্রতিষ্ঠানটির সাভারের ওয়্যারহাউস পরিদর্শন করেছেন। আজ সোমবার দুপুরে সাভারের বলিয়ারপুর বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন এলাকার ভাড়ায় পরিচালিত ওয়্যারহাউসটি পরিদর্শন করেন তাঁরা।
আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বে পরিচালনা কমিটির পাঁচ সদস্য ওয়্যারহাউসে যান। কিছু সময় গুদামটি পরিদর্শন করে তা আবার সিলগালা করে দেন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।
প্রতিষ্ঠানটির দায় ও সম্পদ পরিস্থিতি সরেজমিন দেখতেই সাভারে যান কমিটির সদস্যরা। অন্য সদস্যরা হলেন ইভ্যালি পরিচালনায় দায়িত্ব পাওয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ওএসডি হওয়া আলোচিত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন, সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট ফখরুদ্দিন আহমেদ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শামীম আজিজ।
স্থানীয়রা জানায়, আমিনবাজারের অদূরে লোকসানে বন্ধ হয়ে যাওয়া পিংক ফুডের একটি গুদাম ওয়্যারহাউজ হিসেবে ভাড়া নেয় ইভ্যালি।
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর র্যাব গ্রেপ্তারের পর পরই এই ওয়্যারহাউস থেকে মূল্যবান অনেক মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।
ওয়্যারহাউস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমিটির প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক জানান, ভেতরে কী আছে না আছে, তা আমরা এখনো ইনভেন্ট্রি (তালিকা) করিনি। জাস্ট এক নজর দেখলাম।
ভেতরে কী দেখলেন? এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, এখন কি আপনাকে বলতে পারব, ভেতরে কী আছে না আছে? তিনি আরও বলেন, ওয়্যারহাউসে কিছু টেলিভিশন, কোমল পানীয়সহ ইলেকট্রনিক মালামাল রয়েছে। কিন্তু আমাদের জানানো হয়েছে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই ওয়্যারহাউস থেকে মূল্যবান মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, এখন আমরা ওয়্যারহাউসটি সিলগালা করে দেব। আজ সবে আমাদের তৃতীয় বোর্ড মিটিং হলো। আমাদের অনেক কিছু বোঝার আছে, দেখার আছে। সময় লাগবে। বাইরে থেকে যতটুকু দেখা যায়, সেটাই আজ দেখলাম। এখন আমরা ইনভেন্ট্রি করব। অডিট করব। প্রতারিত গ্রাহক ও মার্চেন্টের স্বার্থ সুরক্ষায় নিবিড়ভাবে কাজ করছে হাইকোর্ট গঠিত নতুন পরিচালনা কমিটি—সেটাও স্মরণ করিয়ে দেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা শুরুর মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন সাভারের বলিয়ারপুর এলাকার সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মোহাম্মদ রাসেল। ২০০১ সালে বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকে যোগ দেন তিনি। দীর্ঘ ছয় বছর সেখানে চাকরি করে ২০১৭ সালে ডায়াপার বিক্রির ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।
২০১৮ সালের শেষ দিকে গড়ে তোলেন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি। মোটরসাইকেল, গাড়ি, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যে শতভাগ ক্যাশ ব্যাক অফার কখনো বা সাইক্লোন, আর্থকোয়াকের মতো অফার দিয়ে বাজারে প্রচলিত মূল্যের চেয়ে ৫০ ভাগ কমে পণ্য বিক্রির ফাঁদ তৈরি করে রাতারাতি আলোচনায় চলে আসে ইভ্যালি। পরে সাভারেই বেশকিছু স্থাপনা ভাড়া নিয়ে সেখানে গড়ে তোলা হয় ওয়্যারহাউস। এসব স্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন রাসেলের ভাগ্নে ও স্বজনরা।
প্রতারণার বিষয়টি আলোচনার তুঙ্গে এলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে গত জুন মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্ত রিপোর্টে ইভ্যালির দায়ের বিপরীতে ছয়গুণ দেনার বিষয়টি উঠে আসে। পরে ধীরে ধীরে কোম্পানির প্রতি মানুষের আস্থায় ধস নামে। এরপর ইভ্যালির দুই লাখের বেশি গ্রাহক ও মার্চেন্টের সঙ্গে প্রতারণার বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনায় আসে।
প্রতারিত গ্রাহক হিসেবে ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর আদালতে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। আবেদনের শুনানি শেষে গত ১৮ অক্টোবর ইভ্যালির ভাগ্য নির্ধারণ করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক আদেশে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে প্রধান করে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করে দেন।
১৬ অক্টোবর নিজেদের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ বন্ধের ঘোষণা দেয় ইভ্যালি। বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে বর্তমানে রাসেল কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আর তাঁর স্ত্রী শামীমা নাসরিন গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।