কবজিবিহীন হাতে লিখে এসএসসি দিচ্ছে মোবারক
জন্ম থেকেই দুই হাতের কবজি না থাকলেও লেখাপড়ায় থেমে থাকেনি মেধাবী ছাত্র মোবারক আলী। পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী মোবারক আলীর বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামে। তার বাবা দিনমজুর এনামুল হক।
আজ সোমবার ফুলবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের ৯ নম্বর কক্ষে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে গণিত বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিল সে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে অতিরিক্ত সময় দেওয়ায় বিধান থাকলেও বাড়তি সময় দরকার হয় না মোবারকের। অন্য শিক্ষার্থীদের মতো নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে হল ত্যাগ করে মোবারক।
মোবারকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্ম থেকে দুই হাতের কবজি ছিল না তাঁর। তাকে নিয়ে চিন্তায় ছিল অবিভাবকরা। কী হবে তাকে দিয়ে। মোবারক আলীর বেড়ে ওঠায় মা মরিয়ম বেগমের চেষ্টার কমতি ছিল না। ছেলের এমন অবস্থায় বিচলিত হলেও ভেঙে পড়েননি তিনি। মায়ের সাহসে ছেলেকে স্কুলমুখী করা হয়। দুই হাত এক জায়গায় করে কলম দিয়ে খাতায় লেখার কৌশল শেখানো হয় তাকে। স্কুলে ভর্তির পর সহযোগিতা করে অন্যান্য ছাত্ররাও। এভাবে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। ২০১৮ জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায়ও পেয়েছে জিপিএ-৫।
চলতি এসএসসি পরীক্ষায় কবজিবিহীন দুইহাত একত্রে করে পরীক্ষার খাতায় লিখছে মোবারক আলী। দুটি হাতের আঙুল না থাকলেও স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের মতোই পরীক্ষা দিচ্ছে সে।
জন্মের পর থেকে এভাবেই সে বড় হয়ে ওঠে। তার দুটো হাত অচল হলেও কখনও দমেনি এ লড়াকু সৈনিকের লেখাপড়া। প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও কঠোর পরিশ্রম করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে এবার।
মোবারক আলীর মা মরিয়ম বেগম জানান, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে বড়। সে নিজের কাজগুলো নিজেই করতে পারে। ওর ইচ্ছাশক্তি প্রবল। আমরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। এরপরেও ওর উচ্চশিক্ষার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
মোবারক আলী বলে, ‘হতদরিদ্র পরিবারে আমার জন্ম। কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন পরীক্ষায় ভালো ফল করে বাবা-মাসহ শিক্ষকদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।’
কাশীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক বলেন, ‘মোবারক প্রতিবন্ধী হলেও যথেষ্ট মেধাবী। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও পারদর্শী। আমি আশা করছি সে ভালো ফলাফল করবে।’
ফুলবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের সচিব গোলাম কিবরিয়া জানান, মোবারক অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই প্রতিটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে নির্দিষ্ট সময়েই পরীক্ষার খাতায় লেখা শেষ করছে।