কুয়েট ছাত্রলীগের সেক্রেটারিসহ নয় শিক্ষার্থী বহিষ্কার
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাঁর অনুসারী আরও আট শিক্ষার্থীকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
সিন্ডিকেট সভায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়েছে বলে কুয়েটের উপাচার্ষ অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন নিশ্চিত করেছেন।
উপাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৭৬তম (জরুরি) সভায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। সিসিটিভির ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যাদি পর্যালোচনা করে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশৃঙ্খলা ও আচরণবিধির আলোকে অসদাচরণের আওতায় সিন্ডিকেট নয় জনের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন- সাদমান নাহিয়ান সেজান (সিএসই বিভাগ, রোল- ১৩০৭০২৪), মো. তাহামিদুল হক ইশরাক, (সিই বিভাগ, রোল-১৫০১০৯০), মো. সাদমান সাকিব (এলই বিভাগ, রোল-১৫১৯০৩৩), আ স ম রাগিব আহসান মুন্না (এলই বিভাগ, রোল-১৫১৯০৪৮), মাহমুদুল হাসান (সিই বিভাগ, রোল-১৬০১০২৯), মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান (এমই বিভাগ, রোল-১৬০৫০৩৯), মো. রিয়াজ খান নিলয় (সিএসই বিভাগ, রোল-১৬০৭০৭৫), ফয়সাল আহমেদ রিফাত (এমই বিভাগ, রোল-১৬০৫০৯৩), মো. নাইমুর রহমান অন্তু (এমএসই বিভাগ, রোল-১৬২৭০১০)।
এর মধ্যে সাদমান নাহিয়ান সেজান কুয়েট ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি গতকাল শুক্রবার খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষক সেলিমের স্বাভাবিক মৃত্যুর দাবি করেছিলেন। তিনি এই স্বাভাবিক মৃত্যুকে রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগ করেছিলেন।
এ সময় সেজান আরও দাবি করেছিলেন, ড. সেলিম সেদিন তাঁর অফিস কক্ষে শিক্ষার্থীদের মধুপানে আপ্যায়িত করেছিলেন।
তবে একইদিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ঘটনার ফুটেজ পর্যালোচনা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের শাস্তি দাবি করে প্রতিবাদ সভা ও স্মারকলিপি প্রদান করে।
কুয়েট শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন গত মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে মারা যান। তিনি লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হার্ট অ্যাটাকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়। অভিযোগ ওঠে, মৃত্যুর আগে অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল খালি করার নির্দেশ দেয়।
অভিযোগ উঠেছে—কুয়েট ছাত্রলীগের বেশ কয়েকটি অলিখিত উপদল রয়েছে। এর একটি প্রভাবশালী উপদল বর্তমান কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সম্প্রতি কুয়েটের লালন শাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান প্যানেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার অভিযোগ ওঠে। ওই প্যানেলের সদস্যরা হলের প্রভোস্ট সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন তাঁদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য।
এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ক্যাম্পাসের রাস্তায় ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরে তাঁকে অনুসরণ করে তাঁর ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তাঁরা আনুমানিক আধা ঘণ্টা ড. সেলিম হোসেনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে। পরে অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের জন্য বাসায় যান। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে তাঁর স্ত্রী লক্ষ্য করেন, সেলিম হোসেন বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। এরপর দরজা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
শিক্ষক ও ছাত্ররা জানান, ড. সেলিম একজন অত্যন্ত সজ্জন, সৎ ও মেধাবী শিক্ষক ছিলেন। ছাত্রবান্ধব হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে৷ ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত অল্প বয়সে তিনি দেশের বাইরে থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে ২০২০ সালে অধ্যাপক পদোন্নতি পান৷ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।