ইন্দোনেশিয়ায় অগ্ন্যুৎপাত : নিহত বেড়ে ১৪, ছাইয়ে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম
ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে মাউন্ট সেমেরু আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ১৪ জনে। গত শনিবার শুরু হওয়া এ অগ্ন্যুৎপাতে বহু মানুষ আহত হয়েছে বলে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মাউন্ট সেমেরুর অগ্ন্যুৎপাত থেকে সৃষ্ট বিশাল ছাইয়ের স্তূপের নিচে পুরো তলিয়ে গেছে বেশ কিছু গ্রাম।
আগ্নেয়গিরির ছাই বাড়িঘরের ছাদ পর্যন্ত ঢেকে দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ঘন ধোঁয়ার মেঘ সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢেকে দেওয়ায় দিনের বেলায়ও আকাশ রাতের মতো ঘন অন্ধকার হয়ে আছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, অন্তত ৫৭ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকে গুরুতর দগ্ধ হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা বিএনপিবি বলছে, অগ্নিদগ্ধদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
১১ গ্রাম ছাইয়ের তলায়
অগ্ন্যুৎপাতে লুমাজাং প্রদেশের অন্তত ১১টি গ্রাম ছাইয়ের নিচে সম্পূর্ণ চাপা পড়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালানো গ্রামবাসীদের অনেকেই মসজিদ এবং অস্থায়ী কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
বিএনপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এলাকা থেকে এ পর্যন্ত ৯০০ জনের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু, দম বন্ধ করা ধোঁয়া আর বিদ্যুৎ সংযোগ পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া অগ্ন্যুৎপাতের পর ঝড়বৃষ্টিতে আগ্নেয়গিরির লাভা ও ধ্বংসাবশেষ মিশে কাদায় পরিণত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় কর্মকর্তা তরিকুল হক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ওই এলাকার সঙ্গে নিকটবর্তী মালাং শহরের সড়ক ও সেতু যোগাযোগও অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
তরিকুল হক বলেন, ‘খুব দ্রুত পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে।’
ছাইয়ে চাপা পড়া ভবনগুলোতে আটকে পড়া ১০ জনকে এরই মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিএনপিবি জানাচ্ছে।
জরুরিকালীন কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো আকাশ ঢেকে ফেলা বিশাল ছাইয়ের মেঘ থেকে প্রাণ বাঁচাতে এলাকার মানুষদের ছুটে পালানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছে।
এ অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয় গত শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর প্রায় আড়াইটা নাগাদ। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে তিন মাইল (পাঁচ কিলোমিটার) পর্যন্ত এলাকায় কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না।
এয়ারলাইন্সগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ
অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে ভলক্যানিক অ্যাশ অ্যাডভাইজরি সেন্টার বলছে, আগ্নেয়গিরির ছাই জ্বালামুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। ভলক্যানিক অ্যাশ অ্যাডভাইজরি সেন্টার থেকে আগ্নেয়গিরির ছাই-এর সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে এয়ারলাইন্সগুলোকে সতর্ক করা হয়।
এয়ারলাইন্সগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে—অগ্ন্যুৎপাতের ছাই ১৫ হাজার মিটার (৫০ হাজার ফুট) উঁচু পর্যন্ত উঠতে পারে।
ভলক্যানিক অ্যাশ অ্যাডভাইজরি সেন্টারের কর্মকর্তা বলেছেন, বেশির ভাগ উড়োজাহাজ যে উচ্চতায় উড্ডয়ন করে, সেমেরু আগ্নেয়গিরির ছাই তার চেয়েও ওপরে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, এ ছাইয়ের মেঘ এড়াতে এয়ারলাইন্সগেুলোকে তাদের যাত্রাপথ পরিবর্তন করতে হবে।
উড়োজাহাজের ইঞ্জিনের ঠান্ডা অংশে এ ছাই ঢুকলে তা জমাট বেঁধে যায় এবং তাতে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়ে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
এ ছাড়া ছাইয়ের কারণে পাইলটেরা স্পষ্ট দেখতে পাযন না এবং উড়োজাহাজের ভেতরে বাতাসের মান খারাপ হয়ে যেতে পারে। তখন অক্সিজেন মাস্ক পরা অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারে।
জীবন্ত সেমেরু আগ্নেয়গিরি
মাউন্ট সেমেরু আগ্নেয়গিরি থেকে নিয়মিত অগ্ন্যুৎপাত হয় এবং প্রায়ই এ আগ্নেয়গিরি থেকে চার হাজার ৩০০ মিটার উঁচু পর্যন্ত ছাই নির্গত হয়। সে হিসেবে গত শনিবারের অগ্ন্যুৎপাত অনেক শক্তিশালী—বলছেন অস্ট্রেলীয় সংস্থার অগ্ন্যুৎপাত বিশেষজ্ঞ ক্যাম্পবেল বিগস্। তিনি বলছেন, এ ছাইয়ের মেঘ ধীরে ধীরে বাতাসে মিশে চলে যাবে।
ইন্দোনেশিয়ার ১৩০টি জীবন্ত আগ্নেয়গিরির একটি হলো মাউন্ট সেমেরু। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার ৬৭৬ মিটার উঁচু। ২০২০ সালের ডিসেম্বরেও এ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাসিন্দাদের আশ্রয় শিবিরে যেতে হয়েছিল।
প্রশান্ত মহাসাগরে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান ‘রিং অব ফায়ার’ নামের প্লেটের ওপর। ভূগর্ভস্থ এ সংযোগস্থলে প্রায়ই অগ্ন্যুৎপাত ও ভূকম্পন সৃষ্টিকারী প্রাকৃতিক কার্যকলাপ তৈরি হয়।