কক্সবাজারে চার স্কুলছাত্রকে ‘অপহরণ’, ‘রোহিঙ্গা পরিচয়ে’ মুক্তিপণ দাবি
কক্সবাজারে চার স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পেঁচার দ্বীপ মাঙ্গালাপাড়া বাতিঘর কটেজ এলাকা থেকে ওই শিক্ষার্থীদের সেন্টমার্টিনে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর রোহিঙ্গা পরিচয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয় বলে জানায় নিখোঁজ ছাত্রদের পরিবার।
অপহৃত স্কুলছাত্ররা হলো—রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পেঁচার দ্বীপের মাঙ্গালাপাড়া এলাকার মোহাম্মদ কায়সার (১৪), মিজানুর রহমান নয়ন (১৪), জাহেদুল ইসলাম (১৫) ও মিজানুর রহমান (১৪)। তাদের মধ্যে জাহেদুল ইসলাম সোনারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এবং বাকিরা অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
স্থানীয় প্রতিবেশী হাজি আবদু শুক্কুর বলছেন, স্থানীয় বাতিঘর রিসোর্টের কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলম ও মো. ইব্রাহীম নামের দুজনের সঙ্গে ওই স্কুল শিক্ষার্থীদের একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এ সম্পর্কের সূত্র ধরে ওই শিক্ষার্থীদের সেন্টমার্টিনে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহীম। তাদের নিয়ে যাওয়ার পর একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীরা ফিরে না আসায় অভিভাবকেরা খোঁজ নেন। কিন্তু তাদের জীবিত ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। কোনো উপায় না দেখে অভিভাবকেরা রামু থানায় একটি অভিযোগ করেন।
রামু থানায় করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রামুর পেঁচার দ্বীপে বাতিঘর নামের একটি কটেজের কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলম ও মো. ইব্রাহীমের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয় চার স্কুলছাত্রের। সেই সুবাদে গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহীম চার স্কুলছাত্রকে সেন্টমার্টিনে বেড়াতে নেওয়ার কথা বলে টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে বেড়াতে যাওয়ার পর থেকে ওই চার জনের খোঁজ মিলছে না। নিখোঁজের ২৪ ঘণ্টা পর গতকাল বুধবার দুপুরে স্বজনদের কাছে বিভিন্ন অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে ফোন করে রোহিঙ্গা পরিচয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। তা না হলে তাদের লাশ ফেরত দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
বলা হচ্ছে, অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহীম টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ২৬ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা। তাঁরা দুজনই বাতিঘর কটেজের বয় হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
স্কুলছাত্র জাহেদুল ইসলামের বাবা বলেন, ‘বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে জাহেদুলসহ চার জনকে নিয়ে গেছেন জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহিম। যাওয়ার পর থেকে তাদের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য ফোন দেওয়া হলে বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহীমের মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে গতকাল বুধবার দুপুরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী পরিচয়ে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা দাবি করা হয়।’
অপহরণের শিকার কায়সারের চাচা বলেন, ‘মূলত জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহীম চার জনকে সেন্টমার্টিন বেড়াতে নেওয়ার কথা বলে নিয়ে যান। পরে মুঠোফোনে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। ২০ লাখ টাকা কোথা থেকে দেব আমরা?’
রামুর খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সোহেল এ বলেন, ‘অপহৃত স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিবারের পক্ষ থেকে
রামু থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। রামু থানা পুলিশ এ বিষয়ে যাবতীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে শুনেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপহৃতদের উদ্ধারে জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরুপ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি টেকনাফ থানাধীন এলাকায় পড়েছে, আমরা তাদের সহযোগিতায় বিষয়টি তদন্ত করব। নিজেদের জায়গা থেকে যতটুকু পারা যাবে ততটুকুই চেষ্টা করবে পুলিশ।’