ঈদের ছুটি নয়, বেঁচে থাকার দাওয়াই
গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতকে মনে হচ্ছিল চানরাত। কিন্তু সেই রাতের আকাশে চাঁদ ছিল না। নিকষ কালো অন্ধকার জেঁকে বসেছিল শহরে। দেয়ালে-দেয়ালে আতঙ্কের ছায়া। গলি-রাজপথে অন্ধকার যেন চেপে বসে আছে। কিন্তু এরই মধ্যে খোলা ট্রাক-বাসে চেপে বসেছে লাখ লাখ মানুষ। লেভেল ক্রসিংয়ে থেমে দেখলাম, ট্রেন ঢেকে গেছে মানুষে। ভেতরে-বাইরে ঈদে ঘরমুখী মানুষের মতো উচ্ছ্বাস!
বিকেলে মাত্র সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ২৬ থেকে ৪ এপ্রিল সাধারণ ছুটি। কেন এই ছুটি দেওয়া হলো? কোভিড-১৯ যেন সংক্রমিত না হয়। মানুষ যেন ঘরে থাকে। মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করতে জনপ্রশাসনকে সহযোগিতা করতে সশস্ত্র বাহিনী কাজ করবে বলা হলো। কিন্তু আম-মানুষেরা ভাবল, ঈদের ছুটি এগিয়ে এনে তাঁদের ১০ দিনের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁদের চোখে-মুখে সীমাহীন আনন্দ। সরকার হয়তো ২৩ মার্চ রাত থেকেই বন্ধ বা লকডাউন করতে পারত। কিন্তু জনগণের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করার সুযোগ দিয়েছিল। সেই সুযোগ সবাই ঢাকা ছাড়ার কাজে লাগিয়েছে। এই মানুষগুলো একবারও ভাবল না গণপরিবহনে যাত্রী হওয়া কতটা বিপজ্জনক। এ ছাড়া তিনি ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যে ফিরছেন, সেখানে বিদেশফেরত কেউ এসে থাকতে পারেন। বা বিদেশফেরতের সঙ্গে কারো মেলামেশা হয়ে থাকতে পারে।
২৫ মার্চ সকালেও ঘুম ভেঙে পথের দিকে চেয়ে দেখি, ঈদের আদলে সেই ‘নাড়ির টানে’ বাড়ি ফেরা চলছে। রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটে ভিড় আর ভিড়। সরকার অবশেষে ধীরে ধীরে লঞ্চ, ফেরি, বাস, ট্রেন, বিমানসহ সব গণপরিবহন বন্ধ করতে বাধ্য হলো। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। গ্রামে-গঞ্জে ফেরা মানুষ ততক্ষণে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে উৎসবে মেতে গেছেন। এদের বড় একটি অংশের ধারণা তারা করোনায় সংক্রমিত হবে না। বাড়ি ফিরে যেতে যেতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের কেউ কেউ এমন ভিডিও এবং লিখিত মন্তব্য করেছে। তাদের একটি বড় অংশ কোনো সতর্কতাই তোয়াক্কা করছে না।
এখন সমস্যা হলো, যারা গ্রামে-গঞ্জে গেল, তারা কি ঘরে বসে থাকবে? তাদের বাড়িতে কি বিচ্ছিন্ন থাকার পরিবেশ আছে। তাদের বাড়িতে যদি বিদেশফেরত কেউ এসে থাকে, তার জন্য আলাদা ঘর বা শৌচাগারের ব্যবস্থা আছে? এই মানুষগুলো বাজার-হাট বা জনসমাগমে যাওয়া থেকে কি আদৌ বিরত থাকবে? আচরণ ও অভিজ্ঞতা সেই ভরসা দিচ্ছে না। তবুও পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবীর এই বিপন্ন সময়ে তাদের কাছে হাতজোড় করে বলতে চাই—নিজেকে ভালোবাসুন। নিজের ভালো থাকার জন্য হলেও ঘরে থাকুন। সাধারণ এই ছুটিকে উৎসব না ভেবে বেঁচে থাকার দাওয়াই ভাবতে শিখুন।
লেখক : বার্তাপ্রধান, সময় টিভি