প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
মধ্যবিত্ত দর্শককে টানতে পেরেছে এনটিভি
এনটিভি আমার মাথার ওপরে ছিল। মানে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম নিচের তলায় আরটিভিতে। অবশ্য আরটিভির নিয়োগপত্র যখন চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী (ফালু ভাই) হাতে তুলে দিচ্ছিলেন, তখন বলেছিলেন- ‘আমি তো জানতাম তুমি এনটিভিতেই জয়েন করবে।’ তিনি জানতেন না হয়তো, বন্ধ হয়ে যাওয়া একুশে টেলিভিশনের যে বৃহৎ দলটি এনটিভিতে যোগ দিয়েছিল, তারা একুশের বার্তাকক্ষের কয়েকজনকে কালোতালিকা ভুক্ত করেছিল। তারই ফলাফল হিসেবে আমার, আমাদের কয়েকজনের এনটিভিতে যোগ দেওয়া হয়নি। সেই কয়েকজনের মধ্যে আমরা কজন এসে পরে আরটিভিতে যোগ দিলাম। তবে এনটিভির দর্শক হিসেবে আমার যোগদান একুশের অবসর দিনগুলোতে। একুশের ছায়া ছিল স্পষ্ট। থাকারই কথা। কারণ একুশের কর্মীদের নিয়েই তো গড়া ছিল এনটিভি। পরিচ্ছন্নতা এবং রুচিবোধ ছিল পর্দাতে। মধ্যবিত্ত দর্শককে শুরু থেকেই টানতে পেরেছিল এনটিভি।
শহর-গঞ্জে মধ্যবিত্ত দর্শককে ধরতে পারার বড় উপকরণ ছিল এনটিভির অনুষ্ঠান। এনটিভি টকশোর দাপটে অনুষ্ঠান সাজাতে চায়নি। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই পরিকল্পনা এবং রুচির স্পর্শ ছিল। নানা বিষয়ে অনুষ্ঠান এনটিভি প্রচার করেছে, সবখানেই লক্ষণীয় পরিমিতি বোধের স্পষ্টতা। এনটিভির অনুষ্ঠান দর্শকের লুফে নেওয়ার প্রধান কারণ নাটক। একুশে টেলিভিশন নাটক উপস্থাপনে যে নতুনত্ব আনার চেষ্টা শুরু করেছিল, এনটিভিতে এসে তা পূর্ণতা পায়। তবে একুশের নাটকে অনেক নির্মাতার প্রবেশাধিকার ছিল না। ঘরোয়া গোষ্ঠীবদ্ধতার কারণে। এনটিভি সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল বলে শুনেছি।
এনটিভির সঙ্গে আমার একেবারেই সম্পর্ক হয়নি তা বলা যাবে না। হয়েছে অনেক দেরিতে। নাটকের মাধ্যমে। সহকর্মীদের অনুরোধে নাটকের পাণ্ডুলিপি লিখতে হয়েছিল। তাদের সঙ্গে শর্ত ছিল নাটক যদি এনটিভিতে প্রচার হয় তবে লিখতে পারি। আমার কাছে মনে হয়েছিল মোস্তফা কামাল সৈয়দের মতো গুণী মানুষের চোখ দিয়ে যদি নাটকটি প্রচার হয়, তবে সেটি হবে বড় অর্জন। একাধিক নাটক এনটিভিতে প্রচার হয়েছে। একসময় মনে হলো, নাটক প্রচার কোনটি হবে, কোনটি হবে না সেটি বাজারি চাহিদার মাধ্যমে মূল্যায়িত হচ্ছে। অন্যান্য অনুষ্ঠানের বেলাতেও তাই। আমার এই ধারণা এনটিভির অন্দরমহলের মানুষদের সঙ্গেও মিলে যায়। আর আগ্রহ হয়নি নাটক লেখার। এনটিভি নাটকে পুরোনো ধারায় ফিরে এলে, আগ্রহ আবার তৈরি হতেও পারে।
এনটিভি অনুষ্ঠানের মান রক্ষার বেলাতে যে সংকটের মুখে আছে, সেটির মুখোমুখি দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেলই। দর্শক বাইরে চোখ দিয়ে রেখেছে। নানা কৌশলেও তাদের চোখ দেশের টিভির দিকে ফেরানো যাচ্ছে না। চলছে নির্মাতা, প্রযোজক ও টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের অনুকরণ প্রবণতা। ছোট বাজারের দোহাই দিয়ে অনুষ্ঠান নির্মাণের বাজেটে কৃপণতা টেলিভিশনের পর্দার মানকে স্থূল ও নিম্নমুখী করে তুলেছে। এই সুযোগটি আজকাল করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো নিচ্ছে। তারা চ্যানেলের ওপর ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ চায়। অথচ দেশে সৃজনশীল নির্মাতার ঘাটতি নেই। নিজস্ব অনুষ্ঠান তৈরির অফুরান ভাবনা আছে তাদের। এখানে দরকার প্রতিষ্ঠান এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের উদ্যোগ। উভয় পক্ষকেই বুঝতে হবে অনুকরণ বা অন্য দেশের ছায়া-প্রচ্ছায়া অনুষ্ঠান দিয়ে দর্শক আটকানো যাবে না।
লেখক : বার্তাপ্রধান, সময় টেলিভিশন