প্রতিক্রিয়া
বীরগণ একটু সাবধান
একই সপ্তাহে দুটি আলাদা ফেসবুক পেজে দেওয়া হয়েছে ছবি দুটি। ছবিতে আছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন দুই বীর মুস্তাফিজ ও সৌম্য সরকার।
এক ছবিতে মুস্তাফিজ মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। পেছনে আরেক ব্যক্তি। ছবিতে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ‘নিজের শহরে ভাইকে পিছনে বসিয়ে বাইক চালাচ্ছেন আমাদের মুস্তাফিজুর রহমান।’ বিডিক্রিকেটটিম ডটকম নামের বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের ‘ভেরিফায়েড’ ফেসবুক পেজে ছবিটি দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সৌম্য সরকারের ‘ভেরিফায়েড’ ফেসবুক পেজে দেওয়া হয়েছে মোটরসাইকেলের ছবি। সৌম্য মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন।
দুজনেই উদীয়মান ক্রিকেটার। বাংলাদেশের সেরা সম্পদ। ছবি দুটি দেখে আমার আনন্দিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আঁতকে উঠেছি। ভয় লাগল মনের ভেতর। ছবিতে দেখা গেছে মোটরসাইকেলচালক মুস্তাফিজের মাথায় হেলমেট নেই! অন্য ছবিতে সৌম্য সরকারের মাথায়ও হেলমেট নেই!
আঁতকে উঠেছি বার বার। মানজারুল রানা কেন যেন ভেসে উঠলেন চোখের সামনে। বাংলাদেশ যখন বদলে যাওয়া শুরু করেছে, ঠিক ওই সময়ের অগ্রদূতদের একজন ছিলেন মানজারুল রানা। বদলে যাওয়া মানে আকরাম, আমিনুল, খালেদ মাসুদদের পর যাঁরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভয়ডরহীন ক্রিকেটটা শুরু করছিলেন সেই হাবিবুল বাহিনীদের অন্যতম প্রাণভোমরা হয়ে উঠেছিলেন মানজারুল রানা। আজকের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের আগে এ রকমই কিছু হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রানা।
এমনই এক ছুটিতে নিজ এলাকা খুলনা গিয়ে বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন রানা। কে বলেছিল তাঁকে মোটরসাইকেল চালাতে? ২০০৭ সালের ১৬ মার্চ। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বালিয়াখালি সেতুর কাছেই ঘটে দুর্ঘটনা। রানা নিজেই চালাচ্ছিলেন মোটরসাইকেল। আর ফেরা হলো না রানার। চিরতরে চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।
২০০৩ সালের ৭ নভেম্বর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রানা খেলেন প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে। খেলাটা হয়েছিল চট্টগ্রামে। মোহাম্মদ রফিকের পরিবর্তে নতুন বাঁ-হাতি স্পিনার। প্রথম ওভারেই তিনি মাইকেল ভনকে আউট করেন। আন্তর্জাতিক খেলায় বাংলাদেশের প্রথম বোলার রানা, যিনি প্রথম ওভারেই উইকেট পেয়েছেন। এর পরের বছরই ১৯ ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রানা খেলেন প্রথম টেস্ট। ওই টেস্টে দুই উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি দারুণ বল করেছেন আর রান করেছেন দুই ইনিংসে ৩৫ ও ৩২।
২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে সিরিজে দুইবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে নজর কাড়েন রানা। বাংলাদেশ পেয়ে যায় বৈচিত্র্যময় বোলিং আর নিচের দিকে একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান আর তৎকালীন অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের সেরা অস্ত্র।
মাত্র ২৫ ওয়ানডে খেলে ৩৩১ রান এবং ২৩ উইকেট নেন রানা। সন্দেহ নেই টুয়েন্টি টুয়েন্টির জমানায়ও উজ্জ্বল হয়ে থাকতেন রানা। কিন্তু মোটরসাইকেল আর অসাবধানতার কারণে শুধু তিনিই চলে যাননি। বাংলাদেশ হারিয়েছে অমূল্য সম্পদ।
ভয়টা এখানেই। যখন দেখি ছুটিতে গিয়ে সৌম্য আর মুস্তাফিজরাও মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। মাথায় নেই হেলমেট। আর দেশের সড়কের অবস্থা মনে করিয়ে দেওয়ার কোনো দরকারই নেই।
সৌম্য, মুস্তাফিজসহ দেশের নাম যাঁরা উজ্জ্বল করছেন সবাই আমাদের জাতীয় বীর। অমূল্য সম্পদ। এদের অনেক সাবধান থাকা উচিত। আর এদের অনুকরণ করে লাখো তরুণ-তরুণী। তাই এসব বিষয় মাথায় রাখাও দরকার।
আমার মনে হয় এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এগিয়ে আসা উচিত।