দৃষ্টিকোণ
ঈদ আনন্দ শক্তি
এবার ঈদে সংবাদকর্মীদের বরাতে দ্বিগুণ বোনাস। আর্থিক যোগের কথা বলছি না। বলছি কর্মযোগের কথা। ঈদের ছুটি কাটাতে কে কত বিড়ম্বনা ও আনন্দ যোগে ঘরে ফিরল, ঈদ কেমন কাটছে-কাটল,ফিরে আসছেই বা কীভাবে? এই খবরগুলো গণমাধ্যমকর্মীরা গতানুগতিক ভাবেই প্রচার করবে। বোনাস যোগ হচ্ছে বিশ্বকাপ। ঈদের আগেই শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপ উন্মাদনা।
পাঠক, শ্রোতা,দর্শকের সেই চাহিদার খোরাকও জোগান দিতে হচ্ছে সংবাদকর্মীদের। ঈদের ছুটিতে বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলার ফলাফলের বাইরেও দল, খেলোয়াড় ও ভেন্যুর চমকপ্রদ তথ্যগুলোও কুড়িয়ে ভোক্তাদের কাছে পরিবেশন করবে গণমাধ্যম। বিশ্বকাপের সঙ্গে আছে ভোট। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সেখানে ঈদের ছুটিতেও ভোটের হাওয়া বয়ে যাবে। হাওয়া বইবে রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশালেও। ভোটের আবহাওয়ার খবর বাদ যাবে না কোনো গণমাধ্যমেই। এই বোনাস কর্মযোগে এরই মধ্যে যোগ হয়ে গেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড় ধস, সিলেটের বন্যা। রোহিঙ্গা তো রইলই।
টেলিভিশনে যোগ দেবার পর থেকে অফ এয়ারের এক দুইবার বাদে কোনো ঈদই বার্তাকক্ষের বাইরে কাটেনি। শোলাকিয়ার ঈদ জামাত, ঈদ ছুটির সময়ের দুর্ঘটনা, খুন, বিনোদন কোনোটিই বাদ যায়নি মাঠে থাকার সময়ে। পরে যখন বার্তাকক্ষে আটকে গেলাম তখন থেকে অন্দর ও মাঠের সহকর্মীদের নিয়ে কর্মযোগে মেতে আছি। গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকেই আমরা হয়ে পড়েছি নেশাগ্রস্ত। ঈদে বার্তাকক্ষে না থাকলে যে আনন্দের ষোলআনা মেটে না। ঈদের ছুটিতে পাঠক, শ্রোতা, দর্শকদের খবর জানানোর মজা যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি মনে হয়। গণমাধ্যমে পালা করে ছুটির রেওয়াজ তৈরি হয়েছে। রোজার ঈদে যারা ছুটিতে যাচ্ছে, তারা কোরবানি ঈদে কাজে থাকছেন। কেউ কেউ দুই ঈদেই বার্তা কক্ষে রয়ে যাচ্ছেন। ঈদ বার্তাকক্ষে কাটিয়ে তারপর ছুটছেন পরিবারের কাছে। শুধু সংবাদ পরিবেশন নিয়েই যে সংবাদ কর্মীরা ব্যস্ত থাকছেন তা নয়। আছে বিশেষ অনুষ্ঠান ও পাতা উপহার দেওয়ার দৌঁড়ঝাঁপ। সংবাদপত্র বন্ধ থাকলেও তাদের অনলাইন সংস্করণের ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে না।
টেলিভিশনের অনলাইন এবং নিউজ পোর্টালগুলো ভোক্তাদের ব্রেকিং নিউজের অন্যতম ভরসা হয়ে থাকে। আজকাল অনলাইনে অনুষ্ঠান দেখতেও অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন দর্শকরা। পাঠক-শ্রোতা-দর্শকদের তথ্য এবং বিনোদনের উপযোগ মেটানোর মাঝেই আছে গণমাধ্যমকর্মীদের পরিতৃপ্তি। কিন্তু এখানে আর্দ্র মন নিয়ে বলতে হচ্ছে— গণমাধ্যমে কাজ শুরুর পর থেকেই দেখছি চাঁদরাতেও গণমাধ্যম কর্মীদের বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়। বোনাস তো অনেক দূর। আমি নিজেও একটি বৃহৎ করপোরেট গোষ্ঠীর পত্রিকাতে ঈদের আগের রাত ৯টায় বোনাসের কিছু অংশ হাতে পেয়েছিলাম। বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি টেলিভিশন থেকে বেতন, বোনাস কিছু্ই পাইনি। প্রায় প্রতিবারই দেখি কোনো না কোনো গণমাধ্যম পূর্বঘোষণা ছাড়া ঈদের আগে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কর্মীদের বোনাস তো নয়ই, বেতনও মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। চালু গণমাধ্যমগুলো ব্যবসা করলেও কর্মীদের বেতন বোনাস দিতে কৃপণতা দেখায়। কেউ দেয়, কেউ দেয় না। তারপরও পর্দায় দর্শকরা গণমাধ্যমকর্মীদের হাসিমুখে কোনো খাদ খুঁজে পায় না। যারা পর্দার আড়ালে থাকে, টেলিভিশন, বেতার, পত্রিকায় তাদের উচ্ছ্বাসের ঢেউ, কোনো আয়োজনে কমতি রাখে না। আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা নীরবে সয়ে যাই, সয়ে যেতে জানি, এই আমাদের আনন্দ শক্তি!
লেখক : বার্তা প্রধান, সময় টিভি