ফিরে দেখা
কেমন গেল ২০১৫ সাল?
ভোট, বই, পিএসসি-জেএসসি ফলাফল উৎসবে শেষ হলো গুম আর বোমের উৎসব দিয়ে শুরু হওয়া বছরটি। হারানো ও প্রাপ্তির আলোচিত-সমালোচিত নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় কেটেছে বিদায়ী পুরো বছরটি। আপদ-বিপদ পিছু ছাড়েনি কোনো সেক্টরকেই। জঙ্গিবাদের উত্থান বছরজুড়ে ভাবিয়ে তুলেছে দেশবাসীকে। বছরের শেষ সময়ে রাজশাহীর বাগমারায় আহমদিয়া মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দেয়। এর আগে রাজধানীর হোসেনী দালানে তাজিয়া মিছিলে, বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মসজিদে, চট্টগ্রামে বন্দরটিলা এলাকার নৌ-ঘাঁটিসংলগ্ন মসজিদে বোমার ঘটনা দেশের জন্য অশুভ ইঙ্গিত।
গত বছরের শুরু থেকেই সরকারকে পায় রাজনৈতিক সহিংসতা মোকাবিলার আপদে। উটকো আপদ ছিল ঘরেও। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সৈয়দ আশরাফের বিদায়, ইসলাম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় লতিফ সিদ্দিকীর জেল খাটা এবং দল ও সরকার থেকে বিতাড়ন বছরের অন্যতম ঘটনা। সরকারের হালখাতায় যোগ হয়েছে বিএনপিকে রাজনীতির মাঠছাড়া করে নির্বাচনের মাঠে আনতে পারার সাফল্য। বছরের শুরু থেকেই দেশব্যাপী নাশকতা ও পেট্রলবোমা মোকাবিলার সঙ্গে বেগ পেতে হয় বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্বেগ প্রশমনে। দুই দলকে সহিংসতা বন্ধ করে সংলাপে বসতে জাতিসংঘ মহাসচিব ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের অগ্রাহ্যের পাশাপাশি আয়ত্তেও রাখতে হয়েছে সরকারকে। বছরের শেষদিকে জাপানি ও ইটালীয় নাগরিক হত্যায় কূটনৈতিক সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশের। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খায় সরকার। নভেম্বরে যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করলে ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনারকে তলব। সৃষ্টি হয় তিক্ততা। এর আগে, আগস্টে ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী ডেসমন্ড স্যোয়েন ঢাকা সফরে এসে ধিক্কার জানান বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের।
শোক দিবসে বেগম জিয়ার জন্মদিন পালন করা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরোধিতা ও সমালোচনা ছিল আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সরকারের হার্ডকোর অংশ থেকে মনে করা হয়, এর সুবাদেই এবার শোক দিবসে কেট কাটাসহ জন্মদিনে আলিশান আয়োজন করেনি বিএনপি। এ ছাড়া এবার জন্মদিনে দেশেও ছিলেন না বেগম জিয়া। বিরতিহীন টানাপড়েনের পর শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মূল কাজের উদ্বোধনে উতরে গেছে সরকার। দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারে ভিন্ন আমেজ তৈরি হয়েছে গত বছর।
২০১৫ এর মাঝামাঝিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ও স্থল সীমান্ত চুক্তি সই বিদায়ী বছরে সরকারের বিশাল কূটনৈতিক অর্জন। জুনের ৬ তারিখে মোদির দুদিনের সফরে সই হয় স্থলসীমান্তসহ প্রায় দুই ডজন চুক্তি। বিলুপ্ত হয় ছিটমহল। দুই দেশের বোঝাপড়ায় ১১ নভেম্বর ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয় উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে। পরদিন ১২ নভেম্বর ভারত ফেরত দেয় নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের আসামি নূর হোসেনকে। বছরের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ অর্জনে ভিন্ন উচ্চতা অনুভব করে সরকার। এ বছর প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ সফর করলেও নিরাপত্তার কারণে যাননি ফ্রান্সে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে।
এদিকে, বিএনপি ও বেগম জিয়ার কেটেছে অন্তহীন বিপদে, দুর্ভোগে। বছরের শুরুতে হরতাল-অবরোধ ডেকে টানা ৯২ দিন গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। পুলিশের ছোড়া পেপার স্প্রেতে অসুস্থ হন তিনি। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা ছাড়া অফিসের সামনে ময়লার ট্রাক রেখে দেওয়াসহ বিভিন্ন দুঃখজনক আয়োজনে চরম দুর্ভোগে ফেলা হয় তাকে। বছরজুড়ে বেশ কয়েকবার আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। হাজিরার পথেও হন হামলার শিকার। হামলায় পড়েন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণায়ও। ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে গ্রেফতার মির্জা ফখরুল। এর মধ্যেই ৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে আসে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা। ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় মারা যান আরাফাত রহমান কোকো। ১৩ জানুয়ারি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানকে লক্ষ্য করে গুলি, আন্দোলনের এক বিশেষ মুহূর্তে ১১ মার্চ যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ নিখোঁজ, ৩ মে রাজশাহীতে কারাবন্দি নাসিরউদ্দিন পিন্টুর মৃত্যুর মতো নানা দুর্যোগে কেটেছে দলটির ২০১৫ সাল। খালেদা জিয়া ৫ এপ্রিল দুই মামলায় হাজিরা দিতে কার্যালয় থেকে বের হন। হাজিরা দিয়ে বাসায় ফেরার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তাঁর অবরুদ্ধের ৯২ দিন। ১৫ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য যান লন্ডনে। দুই মাসের বেশি সময় পর ফেরেন ২১ নভেম্বর। এর মাঝেই ২৯ অক্টোবর দল ছাড়েন ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। বছরের শেষলগ্নে পৌরসভা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছে বিএনপি। এর আগে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকেনি তারা।
দুই বিদেশি হত্যা, একের পর এক ব্লগার ও প্রকাশক খুন, পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে হামলা এবং তাজিয়া মিছিলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা সারা বছরই ব্যস্ত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এ বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একই কায়দায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্লগার, লেখক ও প্রকাশক অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, নিলাদ্রী নিলয়, অনন্ত বিজয় এবং ফয়সল আরেফিন দীপনকে। গুলশানের কূটনৌতিকপাড়ায় ২৮ সেপ্টেম্বর ইতালিয়ান নাগরিক সিজারে তাবেলাকে গুলি করে হত্যার রেশ না কাটতেই ৩ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়ায় একই কায়দায় গুলি করে হত্যা করা হয় জাপানি নাগরিক হোসি কোনিওকে। ২৪ অক্টোবর পুরান ঢাকার হোসেনী দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় ঘটে বোমা বিস্ফোরণ। মারা যায় একজন, আহত হয় শতাধিক। ২৩ অক্টোবর গাবতলী এবং ৫ নভেম্বর আশুলিয়ায় চেকপোস্টে হামলা করে পুলিশ সদস্য হত্যা অপরাধের ধরনে নতুনত্ব ভাবিয়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এসব ঘটনায় দায় স্বীকার করে জঙ্গি সংগঠন আইএসের বার্তা দেওয়ার দাবি ব্যস্ত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
বিদায়ী বছরটির কিছু দুঃখজনক ঘটনা অতীতের রেকর্ড ভেঙে মানুষ দেখেছে অন্য এক বাংলাদেশ। পিষিয়ে মারা, পিটিয়ে মারার অপসংস্কৃতি নতুন রূপ নেয়। উপর্যুপরি এ ধরনের কয়েকটি ঘটনা আদিম প্রবণতাকে হার মানিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গাছের সঙ্গে বেঁধে পেটানো, মেরে লাশ গুম করার সঙ্গে শিশু হত্যা ও নির্যাতনের কিছু ঘটনাকে অনেকে গজবের সঙ্গে তুলনা করেন। ৮ জুলাই সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমেও জায়গা করে নিয়েছে বর্বরতার দৃষ্টান্ত হিসেবে। রাজন হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে ৩ আগস্ট খুলনায় আরেক শিশু রাকিবকে খুন করা হয়েছে আরো বীভৎসভাবে। কম্প্রেসার মেশিন দিয়ে পায়ুপথে হাওয়া ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়েছে এই শিশুকে। এরপর রয়েছে মায়ের পেটে শিশু গুলিবিদ্ধের ঘটনা। ২৩ জুলাই মাগুরায় টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে যুবলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে অন্তঃসত্ত্বা মা নাজমা বেগম গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ হয় গর্ভের শিশুটিও। ম্যানহোল, পাইপ, নালায় পড়ে শিশুমৃত্যুর কয়েকটি ঘটনা মানবতাকে কাঁদিয়েছে। রাজধানীর শাহজাহানপুরে রেলওয়ের পানির খোলা পাইপে পড়ে করুণ মৃত্যু হয়েছে চার বছরের শিশু জিহাদের। অপরাধীরা অধরাই থেকে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষগুলোর চৈতন্য না আসায় রাজধানীর রাজপথ থেকে অলিগলি পর্যন্ত হা করে আছে মৃত্যকূপগুলো। যার জেরে গত ৮ ডিসেম্বর শ্যামপুরের কদমতলীতে ময়লার ভাগাড়ে পড়ে মারা গেছে নীরব নামের আরেক শিশু। এ ধরনের মৃত্যু হত্যারই নামান্তর। এদিকে, নারী নির্যাতন ও নিপীড়নও পিছু ছাড়েনি বিদায়ী বছরে। চলন্ত বাসে-মাইক্রোবাসে ধর্ষণ, গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে ও গায়ে গরম পানি ঢেলে নির্যাতনের মতো বীভৎস্য নির্যাতনের খবর দেখা গেছে বছরজুড়েই।
বিচারালয়ও ছিল বেশ আলোচিত। মানবতাবিরোধী অপরাধে সবচেয়ে বেশি ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বিদায়ী বছরটিতে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রায় নিয়ে নিবন্ধ লেখায় দৈনিক জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তিনটি মামলা চলবে বলে হাইকোর্টের আদেশও ছিল আলোচিত ঘটনা। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ২১ নভেম্বর একদিনে একই সময়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও তা কার্যকরে মাত্রা যোগ করে এ ফাঁসি দুটি। সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশ্বাসের সঙ্গে ভয়ও তৈরি হয়। এর আগে, ১১ এপ্রিল রাতে ফাঁসি হয় আরেক জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের। এ ছাড়া শেষ হয়েছে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর আপিল শুনানিও। পুরো বছরই বেশ কবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহকে আদালত অবমাননার দায়ে দণ্ড এবং আপিল বিভাগে এ দণ্ড বাতিলও বিদায়ী বছরের বিশেষ আলোচিত ঘটনা।
বছরটি অর্থনীতির জন্য ছিল ধারাবাহিকতা রক্ষার। জিএসপি নিয়ে বছরজুড়েই চলে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ টানাপড়েন। বেসরকারি বিনিয়োগে অনীহার চ্যালেঞ্জ থেকে গেছে বছরজুড়েই। বাড়েনি বিদেশি বিনিয়োগও। অর্জনের মধ্যে আছে বিশ্বব্যাংকের তালিকায় নিম্ন আয়ের দেশের সারি থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উঠে আসা। আগের বছরগুলোর সব রকম ইতিবাচক আর নেতিবাচক প্রবণতা সমানভাবে প্রভাব ফেলেছে। আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রেখে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার নতুন বাজেট হয়েছে। যথারীতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপি বাস্তবায়ন হার বিশ শতাংশেরও নিচে। বছরজুড়ে নিয়ন্ত্রণে ছিল মূল্যস্ফীতি। বছর শেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ হয়েছে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫৬। আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব ছিল প্রকট। বেসিক ব্যাংক থেকে অনিয়ম করে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা তছরুপের দায়ে দুদক ৫৪টি মামলা করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে মূল হোতা সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু। হলমার্কের চুরি করা অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রেও কোনো সাফল্য আসেনি। মাসে ১০০ কোটি টাকা করে ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করে জামিন নেওয়া হলমার্ক চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম একটি টাকাও ফেরত দেননি। বাতিল হয়নি জামিনও।
বিদায়ী বছরে চিরবিদায় নিয়েছেন মেধা ও সৃষ্টিশীল প্রতিভার রাজনীতি, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রিয় কিছু মুখ। প্রখ্যাত আইনবিদ ও দেশের নবম প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালকে হারিয়েছি বছরের শুরুতে ৫ জানুয়ারি। তিনি পল্লীগীতির মরমি সাধক আব্বাস উদ্দিনের ছেলে। স্বনামধন্য চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম গত হয়েছেন ১১ জানুয়ারি। ভাস্কর নভেরা আহমেদ ৬ মে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ৭ জুন হারিয়েছি খ্যাতনামা রাজনীতিক, আইনবিদ, সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলীকে। ১৪ জুন চলে গেলেন সাংবাদিক হাবিবুর রহমান মিলন। ছাত্র, শ্রমিক আন্দোলনে বেড়ে ওঠা রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদ আকস্মিক মৃত্যুবরণ করেছেন ২৭ আগস্ট। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর চিরবিদায় ১৪ সেপ্টেম্বর।
বছরের পুরোটা সময়জুড়েই ক্রিকেটের জয়জয়কার। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অভাবনীয় সাফল্যের পর ভারত, পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জিতে দেশবাসীর মুখে হাসি ছড়িয়েছে মাশরাফি বাহিনী। তবে বছরের শেষলগ্নে সাফ গেমসে ফুটবলের ব্যর্থতা সেই আনন্দের লাগাম টেনে ধরেছে। শেষ পর্যন্ত নিয়ম রক্ষার ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জেতার সান্ত্বনায় মাঠ ছাড়তে পেরেছে বাংলাদেশ দল। ক্রিকেট-ফুটবল আসরের সুযোগে বছরজুড়ে ফলাফলবাজি, ওভারবাজি, রানবাজি, বলবাজিতে বাজিকর ও টিকেট কালোবাজারি আরো ডালপালা ছাড়িয়েছে।
এপ্রিলে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট দেবে যাওয়ার মতো একাধিক শক্তিশালী ভূমিকম্পে নেপাল লণ্ডভণ্ডের সঙ্গে নড়ে ওঠে বাংলাদেশও। প্রাকৃতিক দুর্বিপাকের সঙ্গে মানুষের তৈরি দুর্যোগেও ক্ষত-বিক্ষত আমরা। এরপরও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের শাশ্বত নিয়মে একটি সূর্যাস্তে আসে আরেকটি সূর্যোদয়। ৩৬৫ দিন পর ৩৬৬ দিনের আরেকটি বছর শুরু। আশাভঙ্গের বেদিতে বসেও মানুষের জীবনের হালখাতায় নতুন পথের দিশা খোঁজা। ফের সুন্দর আগামীর স্বপ্ন বোনা। আবার অনেকের কাছে ‘যায় দিনই ভালো যায়’।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন