সৌদিপ্রবাসী অবৈধ বাংলাদেশিদের জন্য বিশেষ সেবা
সৌদি আরবে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিদের কনস্যুলার সেবা দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। গতকাল শুক্রবার থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। যা চলবে আগামী ১ জুলাই পর্যন্ত।
সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ নয়টি শহরে সাপ্তাহিক ছুটির দিন কাজ করবে এই কনস্যুলার দলটি। তারা ছুটির দিনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই সেবা দেবে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর ও কার্যালয়-প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম জানান, সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পার্শ্ববর্তী শহরে চলতি মাসসহ আগামী দুই মাস নিবিড় সেবা দেওয়া হবে।
মনিরুল ইসলাম আরো জানান, ভ্রাম্যমাণ সেবা সেন্টারগুলোতে পাসপোর্ট নবায়ন, এমআরপি সংশোধন-বিতরণসহ অবৈধ অভিবাসীদের সৌদি সরকারের ৯০ দিনের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় আউটপাস বা ট্রাভেল ভিসা প্রদানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। চলতি মাসে সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি শহরে এ সেবা দেওয়ার জন্য অবস্থান করবে কনস্যুলার দলটি। আগামী ৭-৮ এপ্রিল বুরাইদা, ১৪-১৫ এপ্রিল তাবারজল-আলজউফ, ২২-২৩ এপ্রিল আল-হাইল, ২৮-২৯ এপ্রিল দক্ষিণ অঞ্চলের দুটি শহর দাম্মাম ও আল-হাছা শহরে অবস্থান করবে ওই পরামর্শক দলটি।
এ ছাড়া আগামী ৫-৬ মে হাফার আল বাতেন, ১২-১৩ মে আল জবাইল, ১৯-২০ মে দাম্মাম, ২-৩ জুন বুরাইদা, ৯ জুন আল গুরুইয়াত, ১০ জুন আরার, ১৬-১৭ জুন হাফার আল বাতেন, ২৩-২৪ জুন আল হাইল ও ৩০ জুন-১ জুলাই আল-হাসায় অবস্থান করবে এই কনস্যুলার দল।
এদিকে, সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব কাজী নূরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অবৈধ অভিবাসীরা যদি কোনো ধরনের মামলায় অভিযুক্ত আসামি হন তবে তাঁরা সৌদি সরকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার আওতাভুক্ত হতে পারবেন না। এ ছাড়া তিন ধরনের অবৈধ অভিবাসীরা ক্ষমার আওতায় দেশে ফিরতে পারবেন।
প্রথমত, যারা সৌদি কাজের ভিসা নিয়ে সৌদি আরব আসার পর ইকামার (রেসিডেন্ট পারমিট) মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর নবায়ন করেনি; নিয়োগকর্তা পলাতক দেখিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে; কাজের ভিসায় এসে কোনো কারণে সব কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেছে, ইমিগ্রেশনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই; অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সৌদি আরব প্রবেশ করেছে; তাছরিহ (অনুমতিপত্র) ছাড়া হজ করতে গিয়ে মামলা হওয়ায় ইকামা নবায়ন করেনি; কারো ডিপেনডেন্ট হিসেবে থাকার পর এখন অবৈধ অথবা সৌদি শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে মামলা হয়েছে; তাদের তিন মাসের মধ্যে সৌদি আরব ত্যাগ করতে হবে। এ জন্য যেসব অভিবাসীর মেয়াদ আছে এমন পাসপোর্ট, পাসপোর্ট না থাকলে দূতাবাস থেকে আউটপাস (বিশেষ ট্রাভেল পাস) সংগ্রহ করে সেটা নিয়ে নিকটস্থ ইমিগ্রেশন অফিস, সফরজেল অথবা ডিপোটেশন সেন্টারে গিয়ে আঙুলের ছাপ দিয়ে এক্সিট ভিসা সংগ্রহ করার পর বিমান টিকেট কিনে দেশে ফেরত যেতে পারবে।’
দ্বিতীয়ত, যারা হজ, ওমরাহ, ট্রানজিট ভিসায় সৌদি আরবে প্রবেশ করেছে এবং ইমিগ্রেশন বা পাসপোর্ট অধিদপ্তরে ফিঙ্গারপ্রিন্ট আছে, তবে বর্তমানে কোনো কাগজপত্র সঙ্গে নেই এমন প্রবাসীরাও দূতাবাস থেকে আউটপাস সংগ্রহ করে সেটা নিয়ে নিকটস্থ তারহিল, সফরজেল অথবা ডিপোটেশন সেন্টারে যোগাযোগ করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে ট্রাভেল রেকর্ড/বর্ডার নাম্বার সংগ্রহ করে, সেটা নিয়ে টিকেট করে দেশে ফিরতে পারবে।
তৃতীয়ত হজ, ওমরাহ অথবা ট্রানজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছে এবং সব প্রমাণাদি (ভিসা নম্বর, বর্ডার নম্বর, ভিসার কপি) সঙ্গে আছে এমন প্রবাসীরা বিমান টিকেট নিয়ে সরাসরি বিমানবন্দরে গিয়ে সেখানে ইমিগ্রেশনের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে দেশে ফিরতে পারবে।
যেসব অবৈধ অভিবাসীর পাসপোর্ট, ইকামা বা ইমিগ্রেশনে হাতের ছাপ নেই তাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে ট্রাভেল পাসের জন্যে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, পাসপোর্টের ফটোকপি অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি আবেদনের সঙ্গে জমা করতে হবে। এসব কাগজপত্র না থাকলে মা, বাবা অথবা বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করে আবেদন করতে হবে।
জেদ্দায় কনস্যুলেট দল
অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের দেশে ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে জেদ্দা কনস্যুলেটের একটি প্রতিনিধিদল মদিনায় আউটপাস দেওয়া শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার থেকে মদিনায় জেদ্দা কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল মো. এফ এম বোরহান উদ্দিন মদিনার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর (লেবার) আলতাফ হোসেন ও জেদ্দা সোনালী ব্যাংক প্রতিনিধি সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।
এ সময় মো. এফ এম বোরহান উদ্দিন বলেন, জেদ্দা কনস্যুলেটের অধীনে ৯টি প্রদেশ রয়েছে। প্রবাসীদের আউটপাস দেওয়ার জন্য জেদ্দা কনস্যুলেটের ছয়টি প্রতিনিধিদল একই সঙ্গে ছয়টি জায়গায় কাজ করবেন। তাঁরা ২১-২২ এপ্রিল আলবাহা, ভিসা, জিজান, কামিজ, নাজরান, তাবুক প্রদেশে এই সুবিধা দেবেন। জেদ্দা থেকে প্রতিদিন ২০০-৩০০ অবৈধ প্রবাসী আউটপাস নিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
জন্ম নিবন্ধন না থাকলে
অবৈধ প্রবাসীরা যদি তাঁদের জন্ম নিবন্ধন দেশ থেকে নিয়ে যেতে না পারেন, আউটপাস সংগ্রহ করার বিষয়ে অন্য পরামর্শ দিয়েছেন কনসাল জেনারেল এফ এম বোরহান উদ্দিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশি নাগরিক প্রমাণ করার জন্য তাদের যেকোনো একটি ডকুমেন্ট দেখাতে হবে, যাতে করে বোঝা যায় যে তিনি ওই দেশের নাগরিক। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে সংশ্লিষ্টদের আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে যে কোনো সনদপত্র আনতে হবে।
সৌদি আরবে অবৈধভাবে বসবাসরত অভিবাসীদের কোনো ধরনের জেল-জরিমানা ছাড়াই স্বেচ্ছায় নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে ৯০ দিনের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দেশটির সরকার। এই ক্ষমার আওতায় অবৈধদের বৈধ হওয়ার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। তবে দেশে ফিরে যাওয়ার পর নতুন ভিসা নিয়ে যে কোনো সময় নতুন করে সৌদি আরব যাওয়া যাবে।
আউটপাস সংগ্রহ করার উপায়
সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে দেশটিতে অবস্থান করা বাংলাদেশি প্রবাসীরা। ৯০ দিনের এই সাধারণ ক্ষমায় যারা হজ, উমরাহ, ভ্রমণ অথবা ট্রানজিট ভিসা নিয়ে নির্ধারিত সময়ে ফেরত না গিয়ে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন তাঁরা দূতাবাস থেকে আউটপাস সংগ্রহ করতে পারবেন। সৌদি ইমিগ্রেশন বিভাগ থেকে আঙুলের ছাপ দিয়ে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে পারবেন। পাসপোর্ট সাইজের ছবির সঙ্গে পাসপোর্টের কপি অথবা জন্মনিবন্ধনের ফরমের কপি দিয়ে এই আউট পাস সংগ্রহ করা যাবে।