সৌদির মরুকে শস্য-শ্যামলা বানাচ্ছেন বাংলাদেশিরা
সুজলা সুফলা দেশ বাংলাদেশ। কর্মসূত্রে এই সবুজ দেশটির লাখো মানুষ মরুর দেশ সৌদি আরবে কর্মরত। আর অক্লান্ত পরিশ্রমে মরুর বুকেও সবুজ ফসল ফলাচ্ছে প্রবাসী ওই বাংলাদেশিরা। প্রবাসের মাটিতে বাংলাদেশিদের কৃষি সাফল্য-সুনাম কুঁড়িয়েছে সর্বত্র।
সৌদি আরবের মদিনা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে বিলমাসিহ এলাকা। বাংলাদেশিদের হাতের ছোঁয়ায় মরুময় ওই প্রান্তরটি পরিণত হয়েছে কৃষি নগরীতে। একেবারেই নিষ্ফলা বালি ও কাঁকরময় মরুভূমিকে পরিণত করছেন ফসল উৎপাদনের উপযোগী ক্ষেত্র হিসেবে।
বিলমাসীহ এলাকায় সবচেয়ে বড় কৃষি খামারটি পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম সাতকানিয়া মির্জাখিল কুতুবপাড়ার হাজি মফজলুর রহমানের ছেলে আব্দুল মতলব। প্রায় দেড় বর্গকিলোমিটার আয়তনের তাঁর আলো, তাপ, পানিসরবরাহ নিয়ন্ত্রিত খামারে উৎপাদিত হচ্ছে বিভিন্ন রকম সবজি।
আব্দুল মতলব দেশেও একজন কৃষক ছিলেন। ২৩ বছর বয়সে সৌদি আরবের মদিনায় এসেছিলেন তিনি। এখানেও প্রায় ৩৪ বছর হলো। আব্দুল মতলব তার দেশের কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা, নিজস্ব বুদ্ধি ও কৌশলকে কাজে লাগিয়ে আরবের মরুভূমিকে কৃষি খামার করে চলেছেন।
পরিশ্রমী কৃষক আব্দুল মতলব জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর রয়েছে কৃষির প্রতি টান। রয়েছে মাটির প্রতি অন্যরকম মমতা। এই সত্য বারবারই প্রমাণিত হয় পৃথিবীর দেশে দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কৃষি সাফল্যের মধ্য দিয়ে।
অনাবাদি, পতিত, বালি-কাঁকর মেশানো যেমন মাটিই হোক, অথবা আবাদি ভূমির ব্যবস্থা না থাকলেও জৈব উপাদান ব্যবহার করে তাতে ফল, ফুল, সবজি ফলিয়ে দেখিয়ে দিতে পারেন একজন বাংলাদেশি।
আব্দুল মতলবের এই খামারে এখন ১৭জন শ্রমিক কাজ করছেন। কৃষক মতলব নিজে চারা তৈরি করে তাঁর খামারে শিম, ঝিঙ্গা, তিতা করলা, ঢেড়শ, লাউ, মরিচ, কচু, কালো বেগুন, সাদা বেগুন, টমেটো, উৎপন্ন করেন।
চারা রোপণ করার পর থেকে শিম চার মাস, টমেটো ৯০ দিন ও বাকি সবজি ৪৫ দিনের ভিতরে বাজারে বিক্রি করা যায়। এই বাগান থেকে মদিনা, জেদ্দা, রিয়াদে সবজি রপ্তানি করা হয়।
আব্দুল মতলব এনটিভি অনলাইনকে জানান, তাঁর বাগানে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করতেন। অবৈধ প্রবাসীদের জেল জরিমানা ছাড়া দেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ায় বেশির ভাগ দেশে চলে যায়।
পরিশ্রমী এই কৃষক জানালেন, বাংলাদেশ সরকার অবৈধ ওই শ্রমিকদের দেশে বৈধ হওয়ার সুযোগ করে দিলে সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের আরো কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব।