রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরুদ্ধে মদিনায় প্রতিবাদ সভা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে সৌদি আরবে প্রতিবাদ সভা করেছে মদিনা সাংবাদিক পরিষদ। স্থানীয় সময় ৯ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টায় মদিনার যাইকা মেহরান হোটেল মিলনায়তনে এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ও আরটিভির মদিনা প্রতিনিধি সাংবাদিক মুছা আবদুল জলিল। সঞ্চালনায় ছিলেন এনটিভির মদিনা প্রতিনিধি সাংবাদিক মোহাম্মাদ আলী রাশেদ।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তইবা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও মদিনা আরটিভি দর্শক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মঞ্জুরুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন মদিনা বাংলাভিশন দর্শক ফোরামের সভাপতি আবদুস সামাদ আজাদ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুহাম্মাদ সোহাগ আহমদ।
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছিলেন মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার ব্যবস্থা এবং ইসলামী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এমফিল গবেষক, প্রবাসীকাল ডটকমের সম্পাদক ও মদিনা সাংবাদিক পরিষদের সহসভাপতি যাকারিয়া মাহমুদ।
প্রধান আলোচক যাকারিয়া মাহমুদ বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বৌদ্ধ সন্ত্রাসী ও সরকারি সামরিক জান্তা বাহিনী যৌথভাবে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। গত এক মাসে তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিমকে অত্যন্ত নির্মম ও পাশবিক কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার নারীর ইজ্জত লুণ্ঠন করা করা হয়েছে। এই সন্ত্রাসী জালিমদের অত্যাচারে সেখানকার মুসলিমরা দেশতাগে বাধ্য হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
যাকারিয়া মাহমুদ আরো বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যার উসকানিদাতা অং সান সু চির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মঞ্জুরুল হক চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা হালাকু খানের বাগদাদ ধ্বংসের নির্মমতাকেও হার মানিয়েছে। তারা আরাকানের মুসলমানদের সে দেশ থেকে বিতাড়িত করতেই গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চিও রোহিঙ্গা নিধনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করছেন, শুধু নিন্দা নয় বরং মিয়ানমার সরকারকে গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধে বাধ্য করতে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
সভায় অন্য বক্তারা বলেন, মিয়ানমার সরকার মুসলমান শূন্য দেশ গড়তে চায়। তাই তারা সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের দিয়ে নির্বিচারে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করছে। বিশ্বজুড়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায় ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ বলে বাণী প্রচার করলেও মিয়ানমারের বৌদ্ধরা মুসলমান হত্যাকে মনে করছে পুণ্য। তবু এই হিংস্র বৌদ্ধদের জঙ্গি বলা হয় না। নির্যাতিত মুসলমানরাই আজ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী তকমার শিকার। তাঁরা জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্রুত সময়ে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
সভা শেষে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সব ধরনের অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম থেকে মুক্তি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণ কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করা হয়।